সুসজ্জিত ট্রাক বা লরি দিয়ে তৈরি ট্যাবলো। সেগুলোতে রাখা আছে দুর্গা প্রতিমা। বাজানো হচ্ছে ধামসা মাদল। গানবাজনা নৃত্য থেকে বিভিন্ন ক্রীড়াকৌশলও দেখানো হচ্ছে। চলছে ছৌ–নাচসহ আবহমান বাংলার আদিবাসী নৃত্য। এসব ট্যাবলো সারি ধরে চলছে কলকাতার রেড রোডের কাছে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয় ফোর্ট উইলিয়ামের দক্ষিণ গেটের কাছ থেকে। এ হলো কলকাতার ‘দুর্গা কার্নিভ্যাল।’ আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা। এটি শেষ হবে রাত ১১টার দিকে।
আজ কার্নিভ্যালকে ঘিরে মেতে উঠেছে পুরো কলকাতা। হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে এ কার্নিভ্যালে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ইউনেসকো কলকাতার এই দুর্গা উৎসবকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই দেয়। ফলে এ উৎসব এবার নতুন মাত্রা পায়। রাজ্যে দুর্গাপূজোর সংখ্যা এবার বেড়ে ৪৩ হাজার হয়েছে। আর কলকাতায় হয়েছে ২ হাজার ৭০৮টি। অনেকটাই ‘করোনাহীন’ কলকাতায় এবারের দুর্গা উৎসব নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। তাই তো এবার করোনাকে জয় করে দুর্গাপূজায় মেতে উঠেছিল কলকাতাবাসী। এ উৎসবের সর্বশেষ পর্ব কার্নিভ্যাল।
রেড রোডে অতিথিদের জন্য নির্মিত মঞ্চের সামনে প্রতিটি পূজা কমিটি তাদের সদস্য ও শিল্পীদের নিয়ে প্রদর্শন ও পরিবেশন করছে নানান অনুষ্ঠান। কার্নিভ্যাল উপলক্ষে কলকাতা শহরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নামানো হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। নজরদারি করা হয়েছে ড্রোন থেকে। তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ারও।
এই কার্নিভ্যালের জন্য বাছাই করা হয়েছে পুরস্কারপ্রাপ্ত ৯৪টি দুর্গামণ্ডপকে। দর্শকদের সুবিধার্থে লাগানো হয় কয়েকটি জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিন। পুলিশ তাদের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে নজরদারি করছে গোটা কার্নিভ্যাল উৎসবকে।
২০১৬ সালে শুরু হয় প্রথম এই দুর্গা নিরঞ্জন উৎসব বা দুর্গা কার্নিভ্যাল কলকাতায়। প্রথম কার্নিভালে যোগ দিয়েছিল ৩০টি পূজামণ্ডপের প্রতিমা। সর্বশেষ কার্নিভ্যাল হয়েছিল ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর। আজ এ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে কলকাতার বাবুঘাটের গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হবে এই প্রতিমা। বেশ কিছু পূজা কমিটি শোভাযাত্রার পর তাদের প্রতিমা ফিরিয়ে নিয়েও যাবে তাদের নিজ নিজ মণ্ডপে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য।
এবারের এই জাঁকজমকপূর্ণ শোভাযাত্রায় প্রতিটি পূজা কমিটিকে মাত্র ৩ মিনিট করে সময় দেওয়া হলেও অনেকে তিন মিনিটের বেশি সময় ধরে তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে অতিথিদের সামনে। প্রতিটি পূজা কমিটির অনুষ্ঠানে ৫০ জন শিল্পী বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজা কমিটি তিনটি করে সাজানো ট্যাবলো বহন করছে।
কার্নিভ্যালে যোগ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ দেশ–বিদেশের অতিথিরা। যোগ দিয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারাও। আছেন ইউনেসকোর কর্মকর্তারাও।
আজকের এই কার্নিভ্যালে যোগ দেওয়া ৯৪টি সর্বজনীন পূজা কমিটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, কুমারটুলী সর্বজনীন, বড়িশা ক্লাব, মানিকতলা চালতা বাগান, সন্তোষপুর লেক পল্লি, বোসপুকুর শতিলা মন্দির, চেতলা অগ্রগামী, চোরবাগান সর্বজনীন, সুরুচি সংঘ, দমদম তরুণ দল, হরিদেবপুর স্পোর্টিং ক্লাব, হাতিবাগান সর্বজনীন, কালীঘাট মিলন সংঘ, বেহালা ক্লাব, বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি, ভবানীপুর ৭৫ পল্লি, টালা প্রত্যয়।
এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার লক্ষ্য গঙ্গার তীরের বাবুঘাটে। সেখানকার বিভিন্ন ঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে নিরঞ্জন হবে প্রতিমার।