ভারতে নারী সংরক্ষণ বিলের কৃতিত্ব আসলে কার

ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ২০ সেপ্টেম্বর, দিল্লি
ছবি: এএনআই

নারী সংরক্ষণ বিলে দলের সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বললেন, রাজীব গান্ধীর স্বপ্ন এবার পূর্ণ হবে। আজ বুধবার লোকসভায় বিজেপির আনা এই বিল সমর্থন করে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে রাজীব বরাবর সচেষ্ট ছিলেন। পঞ্চায়েত ও পৌর প্রশাসনে ৩৩ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ তিনিই করেছিলেন। অর্ধেক স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল তাঁর। এবার লোকসভা ও বিধানসভায় সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে বাকি অর্ধেকও পূর্ণ হতে চলেছে।

লোকসভা ও বিধানসভার মোট আসনের এক–তৃতীয়াংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণে বিজেপি সরকার সংসদের এই বিশেষ অধিবেশনে বিল এনেছে। বিজেপি এই বিল আনার জন্য নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করেছে। কংগ্রেসও বিলটির জন্য কৃতিত্ব দাবি করেছে।

বিলে সমর্থন করলেও আজ সোনিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই বিলের জন্য দেশের নারী সমাজকে দীর্ঘ ১৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখন তাঁদের আরও অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কেন? কেন অবিলম্বে এই বিল কার্যকর করা হবে না? এই অপেক্ষা কি যথাযথ?

গতকাল মঙ্গলবার লোকসভা ও রাজ্যসভায় সংসদে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষিত নারী আসন রেখে নারী সংরক্ষণ বিল পেশ হয়েছে। এই অধিবেশনেই তা পাস করানো হবে। কিন্তু তা এখনই কার্যকর করা হবে না। পরবর্তী জনগণনা বা জনশুমারির পর লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনী ক্ষেত্রের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ হলে ওই সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

জনগণনা হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। কোভিডের কারণে তা পিছিয়ে যায়। পরবর্তী জনশুমারি ২০২৬ সালে হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নারীদের আসন সংরক্ষণ হচ্ছে না। সোনিয়া এই বিলম্বেরই সমালোচনা করেন।

তবে সেই সঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী বিজেপির চাপও বাড়িয়েছেন। বিল সমর্থন করলেও জনগণনার সঙ্গে জাত গণনারও দাবি তুলেছেন। বস্তুত, জাত গণনার দাবিতে জেডি (ইউ), আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টিসহ অনেক বিরোধী দলই জোরালো দাবি তুলেছে। যদিও বিজেপি ওই দাবি মানা না–মানা নিয়ে নীরব। জাত গণনা হলে দেশের অনগ্রসর সমাজের বহর কত, তা স্পষ্ট হবে।

জনপ্রিয় ধারণা, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত। জনগণনায় তা ঠিক প্রমাণিত হলে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের দাবি আরও বাড়বে। সোনিয়া অবশ্য মহিলা বিল সমর্থনের পাশাপাশি দাবি করেছেন, ৩৩ শতাংশ সংরক্ষিত আসনের মধ্যে তফসিল জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর সমাজের নারীদের জন্য আনুপাতিক হারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এই দাবি মেনে বিলে সংশোধনী আনে কি না, সেটা দেখার।

নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের ভাবনা প্রথম এসেছিল রাজীব গান্ধীর মনে। সেই ভাবনারই ফসল পঞ্চায়েত ও পৌরসভায় ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ। রাজীবের সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছিল নরসিংহ রাওয়ের আমলে। পরে লোকসভা ও বিধানসভায়ও এই ব্যবস্থা চালুর জন্য কংগ্রেস উদ্যোগী হয়েছিল। মনমোহন সিংয়ের শাসনামলে ২০১০ সালে রাজ্যসভায় সেই বিল পাসও হয়। কিন্তু লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা পাস করানো যায়নি।

সেই ঘটনা উল্লেখ করে সোনিয়া বলেন, দেশের স্থানীয় প্রশাসনে এখন ১৫ লাখ নির্বাচিত নারী রয়েছেন। রাজীবের স্বপ্ন অর্ধেক পূর্ণ হয়েছিল। বাকি অর্ধেক এবার পূর্ণ হবে। এর কৃতিত্ব পুরোটাই রাজীবের। এই বিল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে গতকালই তিনি বলেছিলেন, ‘এটা তো আমাদেরই বিল! আমরাই তো বরাবর এই বিল পাস করাতে চেয়েছি!’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপি এই বিল আনার কৃতিত্ব দাবি করছেন। অধিকাংশ দল সমর্থন করছে বলে তা পাসও হয়ে যাবে। কিন্তু বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সংসদে বিপুল গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিজেপি কেন গত সাড়ে ৯ বছর এই বিল আনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেনি? কেন নির্বাচনের মুখে তা করছে?

এসব প্রশ্নের উত্তরও বিরোধী নেতারাই দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদির এটা আরও এক রাজনৈতিক চমক, যা বাস্তবায়িত হতে অন্তত ছয় বছর লাগবে। এই বিল আনার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে মোদি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই নারী সমাজের মন জয়ের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।