বাংলাদেশের অনির্বাণ চৌধুরীর সঙ্গে ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) প্রতিষ্ঠাতা অনুপ চেটিয়ার মেয়ে বন্যা বড়ুয়ার বিয়ে হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আসামের ডিব্রুগড়ের জেরিগাঁওয়ে তাঁদের বিয়ে হয়।
অনির্বাণ চৌধুরী ও বন্যা বড়ুয়া বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ার সময়ে প্রেম হয়। এরপরই তাঁরা বিয়ে করলেন। ডিব্রুগড়ের জেরিগাঁও অনুপ চেটিয়ার গ্রাম। ভারতের গণমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী থাকার সময়ে তাঁর মেয়ে বন্যা বড়ুয়া রাজধানী ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়তেন। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অনির্বাণ চৌধুরী। সেখানেই তাঁদের পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তাঁরা। এরপরই বিয়ে করলেন তাঁরা।
অনুপ চেটিয়া আসামের মটক জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মটক গোষ্ঠীর রীতি মেনেই বিষয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৫ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বিয়ের একটি অনুষ্ঠান হবে। বাংলাদেশের কুমিল্লার ছেলে অনির্বাণ চোধুরী। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। সেখানে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।
২০১৫ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও উলফার মধ্যে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন অনুপ চেটিয়া। ওই বছরই বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাছে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করে। সেই ঘটনার প্রায় সাত বছর পর এ বিয়ে হলো।
বিয়ের ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার অনুপ চেটিয়া ডেকান হেরাল্ডকে বলেন, ‘আমি জেলে থাকার সময়ে তাঁদের প্রেমের বিষয়ে কিছু জানতাম না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আমাদের বিপ্লবে যে ধরনের সাহায্য সহায়তা করেছেন এ জন্য আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আছে। এ বিয়ে নিয়ে কোনো আপত্তি নেই।’
এদিকে বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে অনুপ চেটিয়ার মেয়ের বিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ প্রশ্ন বিশেষ করে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ নিয়ে। অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলছেন, তবে কি অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশিদের আসামের বৈধ নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকানোর উদ্দেশে ১৯৭৯ সালে আসামের শিবসাগর জেলায় গঠন করা হয় ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম–উলফা। উলফার দাবি, অবৈধ অভিবাসীদের কারণে আসামে আদিবাসীরা সংকটে ও সমস্যার মধ্য পড়ছেন। এ জন্য তারা উলফা গঠন করেছেন। এরপরে আসামে ভারতে সেনাদের অভিযান শুরু হলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন অনুপ চেটিয়াসহ শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশে ক্যাম্প স্থাপন করে আসামে কার্যক্রম চালায় উলফা। অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে প্রায় ২৮ বছর ছিলেন। ১৯৯৭ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ি থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৫ সালে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া।