বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপতি করতে চেয়েছিলেন বিজেপির কেউ কেউ, তিনি মানেননি

অটল বিহারি বাজপেয়ী
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে অটল বিহারি বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। বাজপেয়ীর মনে হয়েছিল, গণতন্ত্রের পক্ষে তা ভালো নিদর্শন হতো না। দেশের জন্য বিপজ্জনক হতো। খারাপ নজির সৃষ্টি করত।

প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর মিডিয়া উপদেষ্টা অশোক ট্যান্ডনের লেখা বই ‘দ্য রিভার্স সুইং: কলোনিয়ালিজম টু কো–অপারেশন’ বইয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবর বইটি প্রকাশিত হবে। ট্যান্ডন ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর মিডিয়া উপদেষ্টা ছিলেন।

কারা ওই প্রস্তাব বাজপেয়ীকে দিয়েছিলেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি। ‘ফ্রম দ্য অথর্স পারসোনাল ডায়েরি’ অধ্যায়ে এই প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি লেখেন, বাজপেয়ী শোনামাত্র তা খারিজ করে দিয়েছিলেন। দলের নেতাদের সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে দেওয়াটা মোটেই কাজের কাজ নয়। তেমন করা হলে তা খুবই খারাপ এক নজির সৃষ্টি করবে। দেশের পক্ষে বিপজ্জনক হবে। তিনি কিছুতেই তা হতে দেবেন না।

বাজপেয়ীর যুক্তি ছিল, প্রধানমন্ত্রী থেকে কারও রাষ্ট্রপতি হয়ে যাওয়া ভারতের রাষ্ট্রকাঠামোর সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ভাবনা। কারণ, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ক্ষমতার আলংকারিক পদমাত্র। কর্মরত প্রধানমন্ত্রী সেই পদে বসলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। দেশে রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

বাজপেয়ীকে ওই প্রস্তাব যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষ হতে আরও দুই বছর বাকি। এদিকে সেই বছরই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। ট্যান্ডন লিখেছেন, লালকৃষ্ণ আদভানিকে প্রধানমন্ত্রী করতেই ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অনুমান, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) দিক থেকে তা এসেছিল। সেই সময় সংঘ পরিবারসহ দলের কট্টরপন্থী বলে পরিচিত যাঁরা লালকৃষ্ণ আদভানির অনুগামী ছিলেন, তাঁরা চেয়েছিলেন বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপতি করে বাকি সময়টুকু দেশ শাসনের দায়িত্ব আদভানির হাতে তুলে দেওয়া হোক। আদভানি তখন দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তখনো তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ আখ্যা দিয়ে সংঘ ও বিজেপির বিরাগভাজন হননি।

বাজপেয়ী না সরলে আদভানির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু বাজপেয়ী সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেননি। ২০০৪ সালের নির্বাচনেও তিনিই ছিলেন এনডিএর ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’। যদিও বিজেপির ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ প্রচার সত্ত্বেও ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট।

আদভানিরও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছিল।

অশোক ট্যান্ডন লিখেছেন, সেই বছর ভারতের রাষ্ট্রপতি হন এ পি জে আবদুল কালাম। কালামের নাম বাজপেয়ীই প্রস্তাব করেছিলেন কংগ্রেস নেতাদের কাছে। রাষ্ট্রপতি পদে কাকে বসানো যায়, তা নিয়ে কথা বলতে বাজপেয়ীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কংগ্রেস নেতারা এসেছিলেন। ট্যান্ডনের কথায়, ‘মনে আছে, বাজপেয়ীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সোনিয়া গান্ধী, প্রণব মুখোপাধ্যায় ও মনমোহন সিং। তাঁদের বিস্মিত করে বাজপেয়ী সেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কালামের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই কক্ষে কয়েক মুহূর্তের জন্য নেমে এসেছিল পিনপতন নীরবতা। নীরবতা ভেঙেছিলেন সোনিয়া।

বলেছিলেন, ‘আপনার পছন্দে আমরা চমৎকৃত। আমরা অবশ্যই কালামকে সমর্থন করব। তবে দলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে পরে জানাব।’ ট্যান্ডন লিখেছেন, ‘তারপর যা ঘটে, তা ইতিহাস।’

কালামের নাম কে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তিনিই প্রথম কালামের নাম করেছিলেন। সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংয়ের দাবি, প্রস্তাব ছিল তাঁর। অশোক ট্যান্ডনের দাবি, স্বয়ং বাজপেয়ীই কালামের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। যাঁদের সামনে কালামের নাম তিনি ‘প্রথম’ উচ্চারণ করেন, তাঁদের মধ্যে সোনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিং এখনো জীবিত।