পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় কাঁদানে গ্যাসের শেলে আঘাত পাওয়া ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক কৃষক তার আঘাতের জায়গায়টি দেখাচ্ছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি
পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় কাঁদানে গ্যাসের শেলে আঘাত পাওয়া ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক কৃষক তার আঘাতের জায়গায়টি দেখাচ্ছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি

কৃষকদের চাল–গমের বদলে ডাল–ভুট্টা–তুলা উৎপাদনের পরামর্শ ভারত সরকারের

ভারতের আন্দোলনরত কৃষকদের নতুন সমাধানের সূত্র দিল কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল রোববার চতুর্থ দফার বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে কৃষকদের বলা হয়, ধান ও গমের পরিবর্তে তাঁরা ডাল, তুলা বা ভুট্টার মতো নতুন ফসল উৎপাদন করলে কেন্দ্রীয় সমবায় সংস্থাগুলো তা আগামী পাঁচ বছর ন্যায্য দামে কেনার চুক্তি করতে প্রস্তুত। এতে জমির জলস্তর নেমে যাওয়া আটকানো যাবে।

কৃষক সংগঠনের নেতারা কেন্দ্রের ওই প্রস্তাব বিবেচনার জন্য দুই দিন সময় চেয়েছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত দিল্লি চলো অভিযান স্থগিত থাকবে।

গতকাল চতুর্থ দফার বৈঠক বসে চন্ডীগড়ে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কৃষক নেতাদের সঙ্গে সেই বৈঠকে অংশ নেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, শিল্প বাণিজ্য ও উপভোক্তামন্ত্রী পীযুষ গয়াল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। বৈঠকে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার শস্য বৈচিত্র্যকে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ধান, গম ও আখ চাষের কারণে কৃষিজমির জলস্তর দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আলোচনায় তুলে ধরেন। কৃষক নেতারাও জলস্তর কমে যাওয়ায় নিজেদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কথাটি জানান। এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে ধান ও গমের বদলে অন্য ফসল উৎপাদনের বিষয়টি।

সরকারি সূত্রের খবর, কৃষক নেতাদের বলা হয় তাঁরা অন্য ফসল উৎপাদনের চিন্তা করলে সরকার দৃঢ়ভাবে তাঁদের সমর্থন করবে। ধান ও গমের বদলে বিভিন্ন ধরনের ডাল, তুলা বা ভুট্টার চাষ করলে তাতে জমির উর্বরতা যেমন রক্ষা করা যাবে, জলস্তরও তেমন ধরে রাখা যাবে। উৎপাদিত ফসল ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কিনে নেবে ন্যাশনাল কো–অপারেটিভ কনজিউমার্স ফেডারেশন (এনসিসিএফ) ও ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো–অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (নাফেড) মতো সমবায় সংস্থা।

মন্ত্রীরা বলেন, কৃষকদের স্বার্থে পরবর্তী পাঁচ বছর ওই দুই সংস্থা উৎপাদিত সব ফসল কিনে নিতে কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে। ফসল বৈচিত্র্যের ফলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। আমদানি খরচও কমবে। অর্থনীতির উপকার হবে।

কৃষকদের শঙ্কা, ফসল বৈচিত্র্যের রাস্তায় হাঁটলে তাঁদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ ডাল, তুলা বা ভুট্টার মতো ফসল এসএমপির আওতায় নেই। এই শঙ্কা দূর করে মন্ত্রীরা বলেন, নাফেড বা এনসিসিএফ সে ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে আগাম হিসাব করে কৃষকদের সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হবে, যাতে ক্ষতি না হয় ও কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পান।

কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের বলেন, সরকারি প্রস্তাব তাঁরা বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কাছে রাখবেন। তাঁদের অভিমত দুদিন পর সরকারকে জানাবেন। মন্ত্রীদের তিনি বলেন, অন্যান দাবি কত দ্রুত মানা হবে, সরকার যেন তা নির্দিষ্ট করে জানায়। তত দিন পর্যন্ত কৃষকেরা পাঞ্জাব–হরিয়ানা সীমান্তে অবস্থান করবেন।

কৃষক নেতারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এ কথাও বলেছেন, দাবি মানা না হলে দিল্লি অভিযান অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যেন তাঁদের যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টি না করে।

ধান, গমসহ অন্য ফসলের এমএসপির আইনি বৈধতা ছাড়াও কৃষক নেতারা চান, স্বামীনাথম কমিশনের সব সুপারিশ কার্যকর করা হোক। কৃষক ও কৃষি কর্মীদের পেনশনের ব্যবস্থা ও কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও পুরোনো। আন্দোলনে হতাহত কৃষকদের ক্ষতিপূরণও এতদিন দেওয়া হয়নি, তা মেটানোর দাবিতেও কৃষকেরা আন্দোলন করছেন।