৬৮ শতাংশ ভারতীয় মনে করেন, বহির্বিশ্বে ভারতের প্রভাব বাড়ছে।
৭৯ শতাংশ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আস্থাশীল।
১২টি দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের মোদি সম্পর্কে আস্থাহীনতা প্রকাশ।
ভারতের প্রতি সবচেয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে ইসরায়েল।
ইউরোপের ফ্রান্সে সবচেয়ে কম ৩৯ শতাংশ মানুষ ভারতকে ইতিবাচক মনে করেন
অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিকের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে বিশ্বের বড় ও ধনী দেশগুলোর গড় মানুষের মনোভাবে অমিল কতখানি—তা উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপ সেই অমিল স্পষ্ট মেলে ধরেছে। যেমন ৬৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় বহির্বিশ্বে ভারতের প্রভাব বেড়ে চলেছে বলে বিশ্বাস করেন। তবে পৃথিবীর অন্য ১৯টি দেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বেশিরভাগই তা মনে করেন না। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিকের এই বিশ্বাসের সঙ্গে একমত।
একইভাবে ভারতের ৭৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঠিকমতো কাজ করছেন। তাঁর প্রতি তাঁরা আস্থাশীল। কিন্তু ১২টি দেশের মাত্র ৩৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড় ধারণা তেমন। এসব দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ মোদি সম্পর্কে আস্থাহীনতা প্রকাশ করেছেন। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এই সমীক্ষা শাসক দল বিজেপি ও তার নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশ্চিন্তে রাখবে ঠিকই। কিন্তু তাঁকে যাঁরা ‘বিশ্বগুরু’ জাহির করতে উৎসুক, তাঁরা আশাহত হবেন। কারণ, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বহির্বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবের লেখচিত্র ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
যদিও এখনো অধিকাংশ দেশের কাছে ভারত ইতিবাচক। ২৩টি দেশের ৪৬ শতাংশ গড় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ভারত সম্পর্কে মোটের ওপর ভালো ধারণা পোষণ করেন। আর ৩৪ শতাংশ তা মনে করেন না। এসব দেশের মধ্যে ভারত সম্পর্কে সব দিক থেকে সবচেয়ে ভালো ধারণা ইসরায়েলের।
পিউ রিসার্চ সেন্টার ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঠিক আগে এই সমীক্ষা প্রকাশ করল। ভারতের পাশাপাশি আরও ২৩টি দেশের ৩০ হাজার ৮৬১ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ওই সমীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। সমীক্ষা চালানো হয়েছে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মে পর্যন্ত।
নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন ভারত’-এর পক্ষে চিন্তার বিষয় এটাই যে ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা অধিকাংশ দেশে দ্রুত কমে যাচ্ছে। যেমন ফ্রান্স। ২০০৮ সালে ওই দেশের ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত দিতেন। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে!
গত ১৫ বছরে ভারত সম্পর্কে ৩১ শতাংশ মানুষের ধারণা খারাপ হয়ে গেছে। এই অধোগমন সবচেয়ে বেশি ইউরোপে। জার্মানিতে ২০০৮ সালে ৬০ শতাংশের চোখে ভারত অনুকূল ছিল, এখন সেটা কমে হয়েছে ৪৭ শতাংশ। একমাত্র ব্যতিক্রম নাইজেরিয়া ও কেনিয়া। ভারতের ভাবমূর্তি এই দুই দেশে এখনো অমলিন।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন সম্পর্কে ভারতীয়দের ধারণার সঙ্গে অন্য ২৩টি দেশের গড় ধারণার অমিল আবার বড়ই বেমানান। যেমন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ২৩টি দেশের গড় ধারণা যা, ভারতীয়দের ধারণা তার চেয়ে ভালো। ৬৫ শতাংশ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রকে অনুকূল দৃষ্টিতে দেখেন, অথচ অন্যদের অনুকূলতার রেটিং ৫৯ শতাংশ। রাশিয়ার প্রতি ভারত ঐতিহাসিকভাবেই নির্ভরশীল। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও খুবই ভালো। তার প্রতিফলনও ঘটেছে এই সমীক্ষায়। ৫৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকের রাশিয়া সম্পর্কে ধারণা ইতিবাচক।
কিন্তু অন্য ২৩টি দেশের মাত্র ১৪ শতাংশ গড় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ধারণা তেমন। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়া সম্পর্ক এই বিরূপ ধারণার কারণ হতে পারে। ভারতীয়দের কাছে সবচেয়ে অপছন্দের দুই দেশ হলো পাকিস্তান ও চীন। পাকিস্তান সম্পর্কে ৭৩ শতাংশ ভারতীয়র ধারণা প্রতিকূল, চীনের ক্ষেত্রে সেই হিসাব ৬৭ শতাংশ।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ধারণা ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক। সে দেশের ৬৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভারতকে ভালো চোখে দেখেন। ৫২ শতাংশ ইতালীয়ও তা-ই। কিন্তু নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও গ্রিসের অধিকাংশের ধারণা প্রতিকূল। ফ্রান্স সবচেয়ে বেশি। সেখানে ভালো ও মন্দ দুই দৃষ্টিতে দেখার হার সমান—৩৯ শতাংশ!
চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’-এর অন্যতম শরিক দেশ ভারত। বাকি তিন সদস্যদেশের মধ্যে ৫১ শতাংশ মার্কিন, ৫৫ শতাংশ জাপানি ও ৫২ শতাংশ অস্ট্রেলীয় ভারতকে সুনজরে দেখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের মাত্র ২৮ শতাংশের মনোভাব ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক। সবচেয়ে বড় কথা, সমীক্ষা অনুযায়ী যেসব দেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, ভারত সম্পর্কে সেসব দেশের ৫১ শতাংশ মানুষের ধারণা ভালো নয়। তবে সেই দেশের নাম সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়নি।
নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়র ধারণা অনুকূল হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোয় তাঁর ও তাঁর নেতৃত্বাধীন ভারত সম্পর্কে ধারণা কেমন, তা এই সমীক্ষা থেকে বোঝার উপায় নেই। কারণ, ভারত ছাড়া যে ২৩টি দেশে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ভারতের নিকটতম কোনো প্রতিবেশী দেশই নেই। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকা মাত্র দুটি দেশের উল্লেখ এই সমীক্ষায় রয়েছে। পাকিস্তান ও চীন। তা-ও ওই দুই দেশ সমীক্ষার অংশ ছিল না।
ভারত ছাড়া সমীক্ষা চালানো হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, স্পেন, গ্রিস, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায়।