কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি–আরএসএস তাঁর শিক্ষাগুরু। তারা শেখাচ্ছে কী করা উচিত, কী নয়। তিনি বলেন, বিজেপি ও আরএসএ যত আক্রমণ করছে, ততই তিনি শক্তি সঞ্চয় করছেন। সেই কারণে তাদের তিনি গুরু মানেন।
কংগ্রেস সদর দপ্তরে আজ শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রাহুল বলেন, ‘আমি চাই, তারা আমাদের আরও আক্রমণ করুক। যত আক্রমণ আসবে, ততই আমাদের নীতি ও আদর্শ জোরদার হবে।’
বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষে ভারত জোড়ো যাত্রায় ৯ দিন বিরতি দেওয়া হয়। বিজেপির শীর্ষ নেতারা দাবি করেছিলেন, রাহুল বিদেশে যাবেন বলে যাত্রায় বিরতি দেওয়া হয়েছে। সেই ধারণা নস্যাৎ করে রাহুল আজ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নানা প্রশ্নের জবাব দেন। ঠাট্টাচ্ছলে তিনি এ কথাও বলেন, মোদিজি তো সাংবাদিক সম্মেলন করেন না। তাই সাংবাদিকদের বাড়তি প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁর আপত্তি নেই।
কংগ্রেসের অভিযোগ, ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করতে বিজেপি তৎপর। কোভিডের কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাই কংগ্রেসকে চিঠি লিখেছে। রাহুল নিরাপত্তাবিধি মানছেন না বলে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী সরকারকে জানিয়েছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাহুল বলেন, ‘সরকার চায় আমি বুলেটপ্রুফ গাড়ি চেপে ভারত যাত্রা করি। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? পদযাত্রা কি গাড়ি চেপে করা যায়?’ তিনি পাল্টা বলেন, জনসম্পর্কের জন্য প্রধানমন্ত্রীও রোড শো করেছেন। তাঁদের নেতারা বিধি ভাঙলে কিন্তু চিঠি যায় না। রাহুল বলেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্য বিজেপিকে ভীত করে তুলেছে। তাই তারা যাত্রা বন্ধের ফিকির খুঁজছে। আমার বিরুদ্ধে একটা “কেস” তৈরি করতে চাইছে।’
রাহুল বলেন, এই যাত্রার উদ্দেশ্য দেশের সামনে এক বিকল্প ভাবধারা, আদর্শ, দৃষ্টিকোণ রাখা, যাতে হৃত মূল্যবোধ ফেরানো যায়। মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে শেখে। হিংসা ও ঘৃণার বদলে প্রেম, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ ফেরানো যায়। বেঁচে থাকার এক নতুন লক্ষ্য স্থাপন করা যায়। বিভিন্ন বিরোধী দল এই যাত্রায় সঙ্গী হতে অস্বীকার করছে কেন, জানতে চাওয়া হলে রাহুল বলেন, নীতিগতভাবে সবাই সঙ্গে। কিন্তু সব দলেরই কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। সেই কারণে কিছুটা বাধো বাধো ভাব।
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর নাম করে তিনি বলেন, তাঁরাও এই যাত্রার পক্ষে। তাঁরাও ভালোবাসার দেশ চান, হিংসার নয়। ভারত জোড়ো যাত্রার দরজা সবার জন্য খোলা।
রাহুল বলেন, ১০৮ দিন ধরে পথ চলে তিনি বুঝতে পেরেছেন, দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে এক প্রবল চোরাস্রোত চলছে। বিরোধীরা যদি সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতির বিকল্পের সন্ধান ঠিকমতো দিতে পারে, তাহলে বিজেপি কিছুতেই জিততে পারবে না। ভারত জোড়ো যাত্রা সেই বিকল্পের সন্ধান দিতে চাইছে।
রাহুল বলেন, কোনো দেশে হিংসা, ঘৃণা, অব্যবস্থা থাকলে অন্য দেশ তার সুযোগ নেয়। এই কারণে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, কংগ্রেসের পররাষ্ট্রনীতি চীন ও পাকিস্তানকে কখনো এক হতে দেয়নি। এই সরকার দুই দেশকে এক হতে দিয়েছে। এটা ভারতের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার চীনকে সামলাতে পারেনি। পররাষ্ট্রনীতি ঠিক কেমন হওয়া দরকার, বুঝতেই পারেনি। চীন তাই প্রথমে ডোকলামে অনুপ্রবেশ করেছে। পরে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং। রাহুল বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে চীন প্রস্তুত হচ্ছে। সরকারের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘সীমান্তে যা হচ্ছে, দয়া করে লুকোবেন না। পররাষ্ট্রনীতিকে রাজনৈতিক লাভ–লোকসানের দৃষ্টিতে দেখবেন না।’
শ্রীনগরে যাত্রা শেষ হওয়ার পর কী হবে, জানতে চাওয়া হলে রাহুল বলেন, মানুষের দাবি মেনে তাঁদের কথা শুনে পরবর্তী পদক্ষেপ গৃহীত হবে।
রাহুল আজও সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হন সাদা টি-শার্ট পরে। সে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ঠান্ডা লাগলে ঠিকই সোয়েটার পরব। এখনো আমার ঠান্ডা লাগছে না। ঠান্ডা আমায় কাবু করতে পারছে না।’