ভারতের দীর্ঘ লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চম দফার ভোট হতে চলেছে আজ সোমবার। সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। এ পর্যায়ের ৪৯ আসন ধরলে মোট ৪২৮ আসনে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এরপর আরও দুটি দফায় ২৫ মে এবং আগামী ১ জুন মোট ১১৫ আসনে ভোট হবে। এই ৪৯ আসনের মধ্যে ২০১৯ সালে বিজেপি জিতেছিল ৩২ আসন। ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন।
এ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় রাহুল গান্ধীর নাম। মধ্য-দক্ষিণ উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি থেকে দাঁড়াচ্ছেন দলের মুখ রাহুল এবং পাশের আসন আমেথি থেকে কংগ্রেসের হয়ে লড়বেন চার দশকের বেশি সময় ধরে গান্ধী পরিবারের বিশ্বস্ত অনুগামী কিশোরীলাল শর্মা। এই দুই আসন রাহুলসহ গান্ধী পরিবারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, পরপর তিনবার আমেথি থেকে জেতার পর গতবার (২০১৯) রাহুল এ আসনে হেরে যান বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে। ফলে এবার তিনি আমেথি থেকে সরে রায়বেরেলিতে দাঁড়িয়েছেন। রায়বেরেলিতে এর আগে পরপর ছয়বার জিতেছেন সোনিয়া গান্ধী।
এ ছাড়া এ পর্যায়ে তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (লক্ষ্ণৌ), বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল (মুম্বাই-উত্তর), কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (বারামুল্লা), বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিনী আচার্য যাদব।
এ পর্বে কে কত আসন পাচ্ছেন, সেদিকে পর্যবেক্ষকদের বেশি নজর থাকবে। কারণ, পঞ্চম পর্বের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট জিতলে বাজেট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ মুসলমানদের জন্য খরচ করা হবে। কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি জিতলে উত্তর প্রদেশে রামমন্দির ভেঙে ফেলবে বলেও তিনি দাবি করেছিলেন। মেরুকরণের এই প্রচার মানুষ মেনে নিয়েছেন কি না, সেটাও বোঝা যাবে পঞ্চম পর্বের ফল দেখে।
আজকের পর্বে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে। এই আসনগুলো হলো হুগলি জেলার শ্রীরামপুর, হুগলি ও আরামবাগ; উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁও ও ব্যারাকপুর; হাওড়া জেলার উলুবেরিয়া ও হাওড়া।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটিতেই রয়েছেন তারকা প্রার্থী। যেমন হুগলিতে বিজেপির সংসদ সদস্য অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে আরেক অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শ্রীরামপুর কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণাত্মক আইনজীবী সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লড়ছেন তাঁর কন্যার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে।
অপর গুরুত্বপূর্ণ আসন বনগাঁও। এখানে দাঁড়িয়েছেন গতবারের বিজেপি সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তিনি নমশূদ্র সমাজের ধর্মীয় গোষ্ঠী মতুয়া সমাজের সদস্য। ভারতে যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত হয়েছে, তার পক্ষে গত কয়েক বছর প্রচারণা চালিয়েছেন শান্তনু। নমশূদ্র সমাজ, যাদের বড় অংশ ভারতের বাইরে থেকে এসেছে, তারা নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে দাঁড়ালেও এখনো নতুন আইনে কেউ নাগরিকত্বের আবেদন করেনি। এ অবস্থায় গতবারের মতো মতুয়া ও নমশূদ্র সমাজের ভোট কি বিজেপির সঙ্গেই থাকবে, নাকি তৃণমূলের দিকে ঝুঁকবে, তার ওপর নির্ভর করছে এ আসনের ভাগ্য।
ব্যারাকপুর আসনটিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন অর্জুন সিং, যিনি গতবার বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। কিন্তু এরপর তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন। সম্প্রতি বিজেপিতে ফিরেই তিনি ব্যারাকপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আসন ধরে রাখতে পারেন কি না, সেটা দেখার। ব্যারাকপুরে সিপিআইএম দাঁড় করিয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা দেবদূত ঘোষকে। তিনি মমতাবিরোধী ভোট খানিকটা কেটে তৃণমূলের সুবিধা করে দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।