জনগর্জন সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ মার্চ কলকাতায়
জনগর্জন সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ মার্চ কলকাতায়

এবার বিজেপির বিচার হবে: কলকাতায় জনসভায় মমতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এই বাংলায় একটি আসনও বিজেপিকে নয়। তৃণমূল একাই ৪২ আসনে লড়বে। বিজেপির মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। এই বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে হটিয়ে তৃণমূলের জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। জনগণের গর্জনে হটে যাবে বিজেপি। এবার তাদের বিচার হবে। এই বাংলায় বিরোধীদের বিসর্জন দেবে তৃণমূল।’

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ রোববার পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে জনগর্জন সভার ডাক দেয়। এতে তৃণমূলের হাজার হাজার নেতা–কর্মী যোগ দেন।

মমতা স্লোগান তোলেন, বিজেপি হাজার হাজার মানুষের চাকরি খেয়েছে। এবার বিচার হবে। মানুষ সেই হিসাব বুঝে নেবে। সময় এসেছে। এবার ওদের বিচার হবে।

মমতা বলেন, ‘জেলায় জেলায় বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জন সভা শুরু করুন, বিজেপিকে বিসর্জনের ডাক দিন। বিজেপির বিরুদ্ধে উদ্বাস্তুদের গর্জন, মতুয়াদের গর্জন, সংখ্যালঘুদের গর্জন ও বিসর্জনের আওয়াজ তুলুন। ঘরে ঘরে গিয়ে ওরা তল্লাশি করবে। ভয় পাবেন না। বাংলার মানুষ আছে আপনাদের সঙ্গে। তাই আজই শুরু করে দিন বিজেপিবিরোধী গর্জন।’

মমতা বলেন, গতকাল ভারতের নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন। বাংলার নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁর মতদ্বৈধতা দেখা দেওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। এতেই প্রমাণিত হয়, কী চাইছে নির্বাচন কমিশন।

মমতা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনায় ১১ লাখ বাড়ির অর্থ দেয়নি। আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, সেই সব বাড়ি আমরাই নির্মাণ করে দেব।’

মমতা প্রশ্ন করেন, ‘এই রাজ্যের লোকসভার ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টি বিজেপি পাওয়া সত্ত্বেও তারা কী করেছে এই রাজ্যে? মেট্রোরেলের টাকা আমি দিয়ে এসেছিলাম। এখন ফিতে কাটছে ওরা? তাই আমাদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে আপনারা গর্জন করুন, এক হোন। দাবি করুন, এই বাংলার বকেয়া অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা কেউটে সাপের চেয়ে বেশি ভয়ংকর। এবার ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। নেমে পড়ুন জেলায় জেলায়। বিজেপিকে হটানোর জন্য নেমে পড়ুন গর্জন করে। ওরা টিকবে না আমাদের গর্জনের সামনে।’
জনগর্জন সভার শেষ দিকে মমতা রাজ্যের লোকসভার ৪২ আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। এই ৪২ আসনের মধ্যে আনা হয়েছে ২৬ নতুন মুখ। বাদ গেছেন বর্তমান চার সংসদ সদস্য। এঁরা হলেন অর্জুন সিং, নুসরত জাহান, মিমি চক্রবর্তী ও অপরূপা পোদ্দার।

আবার বিজেপি থেকে থেকে দল ত্যাগ করে আসা চারজনকে মনোনয়ন দিয়েছে তৃণমূল। তাঁরা হলেন কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস, বিপ্লব মিত্র ও মুকুটমণি অধিকারী। এর মধ্যে রয়েছে বিজেপি ও তৃণমূলের দম্পতি প্রার্থী: বিজেপির সৌমিত্র খাঁ এবং তৃণমূলের তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁ।

এবার বহরমপুর আসনে কংগ্রেস নেতা অধির চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়বেন তৃণমূল প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। তবে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন আরেক সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। আবার হুগলি আসনে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে লড়ছেন তৃণমূলের প্রার্থী ও টিভি তারকা ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’–খ্যাত রচনা ব্যানার্জি।

আজ রোববার ছিল সুপার সানডে। আজ দুপুরে বিজেপি জনসভা করেছে সন্দেশখালির ন্যাজাটের আক্রাতলায়। সেখানে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা সন্দেশখালির নারী নির্যাতন এবং শেখ শাহজাহানের  দুর্নীতির নানা চিত্র তুলে ধরেন। তৃণমূলকে বাংলা থেকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন বিজেপি নেতারা।

অন্যদিকে আজ বাম দল সিপিএমও রাজ্যের নয়টি স্থানে সভা করেছে। সেসব সভায় তারা তৃণমূল ও বিজেপির কঠোর সমালোচনা করেছে। বক্তারা বলেছেন, তৃণমূল রাজ্যকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। বিজেপি ধর্মান্ধতার রাজনীতি করে রাজ্যে বিভাজন তৈরি করছে।