ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যে নির্মাণাধীন একটি সুড়ঙ্গধসে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে ১৬ দিনেও উদ্ধার করা যায়নি। এর মধ্যে খননযন্ত্র আবারও বিকল হয়েছে। আজ সোমবার দুপুর থেকে গাঁইতি, হাতুড়ি ও শাবল নিয়ে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছেন শ্রমিকেরা। তাঁরাই এখন সুড়ঙ্গের খননকাজ করবেন।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ধসে যাওয়া সুড়ঙ্গের আর ১০ থেকে ১২ মিটার খুঁড়ে দিতে পারলেই পৌঁছানো যাবে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকের কাছে। তারপর শুরু হবে হুইল স্ট্রেচারে তাঁদের বের করার কাজ। উদ্ধারকাজে সাহায্য করার জন্য নামানো হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও।
লোহা–পাথর কাটার কাজ শ্রমিকেরা করবেন পালা করে। সে জন্য দিল্লি থেকে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকদের আনা হয়েছে। এ কাজে কত দিন সময় লাগবে, এ নিয়ে উদ্ধারকারীরা কিছু বলতে চাচ্ছেন না। কারণ, এর আগে যতবার তাঁরা মনে করেছিলেন শ্রমিকদের উদ্ধার স্রেফ সময়ের ব্যাপার, তখনই কোনো না কোনো বাধা এসেছে, নয়তো বিপর্যয় ঘটেছে। পিছিয়ে গেছে সময়সীমা।
গত শুক্রবার শেষ বিপর্যয় ঘটে খননযন্ত্রে। সুড়ঙ্গের মধ্যে ধসে যাওয়া মাটি–পাথর–লোহার জালে আটকে যায় মেশিনের রোটারি ব্লেডগুলো। ভেঙেও যায়। এতে করে ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজ। এরপর হায়দরাবাদ থেকে বিশেষ ধরনের গ্যাস কাটার এনে ভেঙে যাওয়া টুকরাগুলো কেটে বের করতে হয়। আটক শ্রমিকদের কাছ থেকে খননযন্ত্রটি সে সময় মাত্র ১০ থেকে ১২ মিটার দূরে ছিল।
আজ সোমবার খননযন্ত্রের সব কটি ভাঙা অংশ বের করার পর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খননযন্ত্রটি পুরোপুরি অকেজো। সেটি আর মেরামত করাও যাবে না। এরপর দুপুরে শ্রমিকদের পাঠানো হয়।
এ অবস্থায় দুটি উপায় অবলম্বন করেছে উদ্ধারকারী দল। একটি, সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে হাত দিয়ে মাটি–পাথর–লোহা কেটে এগোনো। দ্বিতীয়টি, পাহাড়ের ওপর থেকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো। দুই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুড়ঙ্গ বিপর্যয় মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স।
সপ্তাহখানেক আগে সরকার অস্ট্রেলীয় এই বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আসে। উত্তরকাশীতে সুড়ঙ্গের কাছে তিনি ডেরা বেঁধেছেন। দুই দিন আগে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আটক শ্রমিকেরা সবাই সুস্থ আছেন, বেঁচে আছেন। এটাই সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক বিষয়। তিনি বলেন, বড়দিনের আগে সব শ্রমিককে নিশ্চিতভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তাঁর কথায় আরও এক মাস সময় লেগে যাবে।
উদ্ধার কবে নাগাদ হতে পারে, তা আজ সোমবার নতুন করে কেউ না জানালেও মনে করা হচ্ছে অতটা প্রতীক্ষা না–ও করতে হতে পারে। কারণ, সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে হাত দিয়ে ধসে পড়া মাটি-পাথর-লোহা সরানো শুরু হলেও আগের দিন গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে পাহাড়ের ওপর থেকে উল্লম্বভাবে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ। সে জন্য বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) পাহাড় কেটে তৈরি করেছে রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে সুড়ঙ্গের ওপরে বসানো হয়েছে পেল্লাই এক ড্রিলিং মেশিন। পাহাড় থেকে লম্বালম্বিভাবে ড্রিল করতে করতে সুড়ঙ্গ ভেদ করে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সময়সাপেক্ষ। মোট খুঁড়তে হবে ৮৭ মিটার। সেই লম্বালম্বি সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢোকাতে হবে কংক্রিটের পাইপ। এর মধ্যে লোহার পাইপ। এই কাজ করতে গিয়ে নতুন কোনো বিপত্তির সামনে খননযন্ত্রকে পড়তে হবে কি না, তা অজানা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গতকাল ২০ মিটার ও আজ সকাল থেকে খোঁড়া হয়েছে আরও ১৭ মিটার। বড় বিপদ বা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে না হলে দু–এক দিনের মধ্যে খোঁড়ার কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা।
স্বস্তির কথা, শ্রমিকেরা সবাই সুস্থ। মনোবলও অটুট। খাদ্য, পানীয়, অক্সিজেন, আলোর জোগান অব্যাহত আছে। মুঠোফোনে যাতে তাঁরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।