বম্বে হাইকোর্ট
বম্বে হাইকোর্ট

‘ফ্যাক্টচেক ইউনিট’ নিয়ে বড় ধাক্কা খেল বিজেপি

বড় ধাক্কা খেল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। বম্বে হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি ‘ফ্যাক্টচেক ইউনিট’(এফসিইউ) অসাংবিধানিক বলে রায় দিলেন। গতকাল শুক্রবার এই রায় দিয়ে বিচারপতি অতুল চন্দুরকর বলেন, সংশোধিত এই বিধি সংবিধানের ১৪ ও ১৯ ধারার পরিপন্থী।

গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অর্ধসত্য ও ভুয়া খবর বা তথ্য রুখতে ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মবিধি সংশোধন করে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় সরকার এই ‘এফসিইউ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মিথ্যা, অর্ধসত্য, ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর খবর চিহ্নিত করার ও সেই সংক্রান্ত বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। বিভিন্ন মহল আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, এভাবে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বম্বে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন বিশিষ্ট কৌতুকাভিনেতা কুনাল কামরা। তাঁর আরজি ছিল, নতুন এই নিয়ম আদালতের বৈধতা না পাওয়া পর্যন্ত এফসিইউ গঠনে স্থগিত রাখা হোক। তিনি সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিলেন, বম্বে হাইকোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিট গঠন–সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি কার্যকর করা যাবে না।

বম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত জানুয়ারি মাসে এই মামলায় বিভক্ত রায় দিয়েছিলেন। বিচারপতি গৌতম প্যাটেল বিধি বাতিলের পক্ষে রায় দিলেও বিচারপতি নীলা গোখেল বিধির পক্ষে রায় দেন। বিচারপতি প্যাটেল বলেছিলেন, এই নিয়ম সেন্সরশিপের নামান্তর। যদিও বিচারপতি গোখেল বলেন, এর ফলে বাক্‌স্বাধীনতা ব্যাহত হবে না। এই বিভক্তির কারণে মামলাটি পাঠানো হয় ‘টাইব্রেকার’ বিচারপতির এজলাসে। বিচারপতি অতুল চন্দুরকর নতুন নিয়মবিধি অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।
বিচারপতি চন্দুরকর বলেন, বিধিতে ‘ভুয়া, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর’ শব্দগুলো ভাসা ভাসা। ওই শব্দগুলো সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

কুনাল কামরা (৩৫) ভারতের প্রতিষ্ঠিত ‘স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান’। তাঁর কৌতুকে মিশে থাকে তীব্র রাজনৈতিক শ্লেষ। সেই কারণে ক্রমেই তিনি বিজেপি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনতার চক্ষুশূল হয়ে পড়েন। ২০১৩ সালে তাঁর এক অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। নরেন্দ্র মোদির জমানায় বহু রাজ্যে তাঁর অনুষ্ঠান জবরদস্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০২০ সালে বেসরকারি বিমানর সংস্থা ‘ইন্ডিগো’র এক ফ্লাইটে কুনালের সহযাত্রী ছিলেন সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী। কুনাল তাঁকে তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সরকারি উদ্যোগে ওই বিমান সংস্থা তাঁকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরের দিন রাষ্ট্রায়ত্ত ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ তাঁকে আজীবন নিষিদ্ধ করে। তৎকালীন অসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হরদীপ পুরী বলেছিলেন, অন্য উড়োজাহাজ সংস্থারও তেমন করা উচিত। সেই কথা শুনে ‘স্পাইসজেট’ ও ‘গো এয়ার’ও একই সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছিল। সেই কুনাল এবার কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপাকে ফেললেন ‘এফসিইউ’ বাতিল করিয়ে।