গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে তৈরি বিবিসির তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কেরালার বামপন্থী ও কংগ্রেসিরা রাজ্যের সব জেলায় ওই তথ্যচিত্র দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ ঠেকাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলিধরন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে তৎপর হতে অনুরোধ করেছেন। রাজ্যের বিজেপি সভাপতি কে সুরেন্দ্রনও মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, কোনোভাবেই যেন তথ্যচিত্রটি দেখানোর অনুমতি না দেওয়া হয়। এতে ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়বে।
গতকাল সোমবার হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় পর্দা টাঙিয়ে ওই তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ দেখানো হয়। উদ্যোগ নিয়েছিল ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন’ ও ‘ফ্র্যাটার্নিটি মুভমেন্ট’ নামে দুটি ছাত্রসংগঠন। এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে বিজেপির ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
একই উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগঠন (জেএনইউএসইউ)। আজ মঙ্গলবার রাতে ছাত্রসংগঠনের কার্যালয়ে তা দেখানোর কথা। তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগের দিন সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এক নোটিশ জারি করে বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রসংগঠন ওই উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। অতএব তথ্যচিত্রটি যেন প্রদর্শিত না হয়। নির্দেশের অন্যথা হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
ছাত্রসংগঠন এবং অন্যরা যাতে বিতর্কিত ওই তথ্যচিত্র দেখাতে না পারে, সে জন্য বিনীত জিন্দল নামের এক আইনজীবী আজ সকালে দক্ষিণ দিল্লির বসন্তকুঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। তাঁর দাবি, তথ্যচিত্রটির উদ্দেশ্য দেশে অশান্তির বীজ বোনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অপদস্থ করা। তথ্যচিত্রটি সরকার নিষিদ্ধ করেছে। তা সত্ত্বেও কেউ যদি তা দেখায়, তাহলে বুঝতে হবে, তারা দেশে ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করছে। ঘৃণা ছড়াতে চাইছে।
কেরালার প্রতিটি জেলায় তথ্যচিত্রটি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিপিএম দলের যুব শাখা ডিওয়াইএফ ও ছাত্রসংগঠন এসএফআই। একই রকম উদ্যোগ নিয়েছে কেরালা রাজ্য কংগ্রেসের বিভিন্ন শাখা ও যুব কংগ্রেস। রাজ্য কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেল জানিয়েছে, ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন সব জেলায় ওই তথ্যচিত্র দেখানো হবে।
কেরালা রাজ্যের বিজেপি নেতারা এর বিরোধিতা শুরু করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই উদ্যোগ দেশদ্রোহিতার শামিল। ভারতকে দুর্বল করার বিদেশি প্রচেষ্টায় তা সাহায্য করবে। দেশের একতা ও সংহতি নষ্ট করবে।
এসএফআই জানিয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। কেরালা যুব কংগ্রেস সভাপতি শফি পরমবিল বলেছেন, গণহত্যা ও বিশ্বাসঘাতকতা শক্তি দিয়ে চাপা রাখা যাবে না। বিবিসির তথ্যচিত্র দেখানো হবেই।
বিবিসির তৈরি তথ্যচিত্রটি ভারতে যাতে না দেখা যায়, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের জরুরি ধারায় ইউটিউব, টুইটারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকেই টুইটের সঙ্গে তথ্যচিত্রটির লিংক জুড়ে দিচ্ছেন।