ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকত্বের আবেদন জমা পড়ছে না বললেই চলে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজেই বলেছেন, রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) অধীনে মাত্র আট ব্যক্তি নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন।
গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে হিমন্ত শর্মা এ তথ্য জানান। প্রায় চার মাস আগে ভারতে সিএএ কার্যকর করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আটজনের মধ্যে আবার নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন মাত্র দুজন। এ জন্য তিনি প্রধানত সিএএবিরোধী বিক্ষোভকারী নেতাদের অতিরঞ্জিত দাবিকে দায়ী করেছেন।
সিএএবিরোধীদের দাবি, এর ফলে ৫০ লাখ পর্যন্ত বেআইনি অনুপ্রবেশকারী নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, সিএএর অধীন নাগরিকত্বের জন্য মাত্র আটজন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে মাত্র দুজন নিয়মমাফিক সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও গত চার মাসে খুব কম মানুষ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আওতায় নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন। তবে আসামের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে বেশি মানুষ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।
আসামে ২০১৯ সালে সিএএর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশ্বশর্মা স্বীকার করেন, তিনি প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করেছিলেন সংশোধিত আইনের অধীনে কমপক্ষে দুই-তিন লাখ মানুষ নাগরিকত্বের আবেদন করবেন। কিন্তু চার মাসে মাত্র দুজন তাঁদের নাগরিকত্বের সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন, সিএএবিরোধী নেতারা দাবি করেছেন, ৩০ থেকে ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসী আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করবেন। এখন দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারীদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
হিন্দু বাঙালিরা সিএএর অধীনে আবেদন না করে আদালতে যাচ্ছেন।
বিশ্বশর্মা বলেন, এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা, যাঁরা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) আওতায় তালিকাভুক্ত নন, তারা সিএএর অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করছেন না। তাঁরা বলছেন, তাঁরা ১৯৭১ সালের আগে ভারতে এসেছেন।
১৯৭১ সালের আগে অর্থাৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার আগে কেউ ভারতে প্রবেশ করলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হন।
আসামে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৯ সালে একটি সংশোধিত এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে সরকার প্রায় ১৯ লাখ লোককে বাদ দিয়ে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। এদের অধিকাংশই হিন্দু।
বিশ্বশর্মা বলেন, ‘আমি অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলেছি, যাঁরা তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের বিষয়ে নিশ্চিত। তাঁরা আদালতে এটি প্রমাণ করতে প্রস্তুত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁরা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব পেতে চান না। বরং তাঁরা আদালতে যেতে চাইছেন।
নাগরিকত্ব আইনের আওতায় আরও আবেদনের সুযোগ করে দিতে অতীতের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পুরোনো মামলা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বিশ্বশর্মা বলেন, সিএএর অধীনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ করে দিতে কয়েক মাস ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া স্থগিত করা দরকার।
সিএএতে আবেদন না করলে ফেরত পাঠানো হবে
নাগরিকত্ব দীর্ঘদিন ধরে আসামে একটি সংবেদনশীল ইস্যু। রাজ্যে বহিরাগত বিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০১৯ সালে আসামে বড় ধরনের সিএএবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল। সহিংসতায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।
সিএএতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে যেসব হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিষ্টান নাগরিক প্রবেশ করেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মুসলমানদের কথা বলা হয়নি।
গতকাল সোমবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তারা আবেদন না করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, সিএএ অনুসারে নাগরিকত্বের জন্য তাঁদের আবেদন করার অধিকার রয়েছে। তাঁরা আবেদন না করলে আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করব। এটি একটি বিধিবদ্ধ নির্দেশ। যাঁরা ২০১৫ সালের পরে এসেছেন, আমরা তাঁদের ফেরত পাঠাব।’
বিশ্বশর্মা গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে বলেন, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে হিন্দু বাঙালিদের বিরুদ্ধে মামলা বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে যে খবর বেরোচ্ছে, তার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো মামলা বাদ দিতে পারি না। আমরা কেবল পরামর্শ দিচ্ছি, মামলা করার আগে আবেদনকারীদের পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করা উচিত। আমরা মামলা বাদ দেওয়ার বা না ফেলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আমরা কেবল আইনি বিধানগুলো তুলে ধরছি।’