ভারতের পার্লামেন্টে হলুদ ধোঁয়া ছড়ানো তরুণেরা কারা, তাঁরা কী চান

ভারতের পার্লামেন্টে হামলায় অভিযুক্তদের বৃহস্পতিবার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়াদিল্লি, ভারত, ১৪ ডিসেম্বর
ছবি: এএনআই

ভারতের পার্লামেন্টের ভেতরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করে আসা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী। তাঁদের বয়স বিশ থেকে ত্রিশের কোঠায়। তাঁরা সবাই বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।

বুধবারের ঘটনায় সাগর শর্মা, নিলম আজাদ, মনোরঞ্জন ডি, অমল সিন্ধে, ভিকি শর্মা ও ললিত ঝা জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। এঁদের পাঁচজনই পুলিশের হেফাজতে আছেন।

ভারতের সংসদে দর্শক গ্যালারি থেকে এক তরুণ লাফিয়ে সদস্যদের গ্যালারিতে নামছেন। ভিডিও থেকে নেওয়া। ১৩ ডিসেম্বর

একজন তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব তরুণ-যুবক ‘ভগত সিং ফ্যান ক্লাব’ নামের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজের সদস্য। এঁদের মধ্যে নিলম আজাদ ও অমল সিন্ধে বারবার চেষ্টা করেও চাকরি পাননি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পুলিশকে বলেছেন, তাঁদের পরিকল্পনা ছিল বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি ও মণিপুর রাজ্যের সহিংসতার প্রসঙ্গ আলোচনায় আনা। পাশাপাশি এসব বিষয় সংসদে আলোচনা হোক, এটিও নিশ্চিত করতে চাইছিলেন তাঁরা।

সাগর শর্মা

লোকসভার দর্শকের গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে যে দুজন রঙিন ধোঁয়া ছুড়েছিলেন, তাঁদের একজন ২৭ বছর বয়সী সাগর শর্মা। দিল্লিতে জন্ম নেওয়া এই যুবক লক্ষ্ণৌতে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভগত সিং ও বিপ্লবী চে গুয়েভারার বিভিন্ন উক্তি বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন সাগর শর্মা।

ভিডিওতে দেখা গেছে, দর্শক গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে লোকসভা স্পিকারের চেয়ারের দিকে এগিয়ে যান সাগর শর্মা। এ সময় তাঁর জুতার ভেতর লুকিয়ে রাখা টিনের কৌটা থেকে হলুদ রঙের ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। এরপরই এমপিরা তাঁকে ধরে পিটুনি দেন। পরে তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গত রোববার দিল্লি আসেন সাগর শর্মা। পরিবারকে বলেছিলেন, একটি বিক্ষোভে অংশ নিতে দিল্লি যাচ্ছেন।

মনোরঞ্জন ডি

সাগর শর্মার পরপরই দর্শক গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়ে রং ছুড়ে মারেন ৩৪ বছর বয়সী মনোরঞ্জন ডি। কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া এই যুবকের বাড়ি মিসোরি। তবে পড়াশোনা শেষে কোনো চাকরি পেয়েছিলেন কি না, সেটি জানা যায়নি।
ছেলের এমন কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না মনোরঞ্জনের বাবা দেবারজি গোদা। তিনি বলেন, ছেলে কোনো অপরাধ করলে তাঁর যেন বিচার হয়।

মনোরঞ্জন ডি সংসদে ঢুকতে যে পাস নিয়েছিলেন, সেটির অনুমোদন দিয়েছে মিসোরির বিজেপি এমপি পার্থ সিমার দপ্তর।

নিলম আজাদ

নিলম আজাদের বাড়ি হরিয়ানায়। ৩৭ বছর বয়সী নিলম এমফিল ডিগ্রি নিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি।

বুধবার সংসদ ভবনের সামনে থেকে নিলমসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় সংসদের ভেতরে টিনের কৌটা থেকে লাল ও হলুদ রঙের ধোঁয়া ছড়ানো হয়। তাঁরা ‘স্বৈরতন্ত্রের’ সমালোচনা করে স্লোগানও দেন।

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত কৃষক আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন নিলম। এ ছাড়া চলতি বছর ভারতের রেসলিং ফেডারেশনে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে নামেন রেসলাররা। ওই বিক্ষোভেও অংশ নেন তিনি।

নিলমের ভাই বলেন, বিএ, এমএ ও এমফিল পাস করে শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নিলম কোনো চাকরি পাননি। মাধ্যমিক শিক্ষক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ছয় মাস আগে জিন্দ জেলায় বসবাস শুরু করেন।

অমল সিন্ধে

নিলম আজাদের সঙ্গে সংসদ ভবনের বাইরে থেকে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণের নাম অমল সিন্ধে। তাঁর বাড়ি মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামে। বাবা একজন কৃষিশ্রমিক। অমল সিন্ধে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বারবার অকৃতকার্য হন।

অমলের বাবা বলেন, পুলিশে নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা বলে গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বাড়ি ছাড়েন তাঁর ছেলে। তিনি খুব ভালো দৌড়াতে পারতেন। সেনাবাহিনী অথবা পুলিশে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর।

সিন্ধে, মনোরঞ্জন, শর্মা ও নিলম বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে আছেন। বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার দিল্লির নিকটবর্তী গুরুগ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযুক্তদের আশ্রয় দেওয়ায় ভিকি শর্মাকেও আটক করা হয়েছে। তিনি একটি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক।

অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে বিহারের ললিত ঝা পলাতক। নিলম আজাদ ও অমল সিন্ধেকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।