বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, জোটের আদর্শ ও নীতি হলো ‘সর্বপন্থা সমভাব’, যার অর্থ সব ধর্মকে এক ভাবা। ভেদাভেদ না করা। সবাইকে নিয়ে চলা। তিনি বলেছিলেন, সেই নীতিতে বিশ্বাস রেখেই এই জোট সরকার চলবে। আগামী দিনে এগিয়ে যাবে।
গত শুক্রবার পুরোনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে দেওয়া ওই আশ্বাসবাণীর ৪৮ ঘণ্টা পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ৭২ সদস্যের যে মন্ত্রিসভা গঠিত হলো, তাতে একজন মুসলিমেরও স্থান হয়নি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচজন মন্ত্রী হলেও জোটের কোনো শরিক কোনো মুসলিমকে মন্ত্রী করেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কোনো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এই প্রথম মুসলিমবর্জিত হয়ে রইল।
নরেন্দ্র মোদির প্রথম মন্ত্রিসভা কিন্তু এমন মুসলিমবর্জিত ছিল না। ২০১৪ সালে একক ক্ষমতায় লোকসভায় জেতার পর মোদি মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছিলেন নাজমা হেপতুল্লাহ। মোদি তাঁকে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও মন্ত্রিসভার প্রথম শপথ মুসলিমহীন ছিল না। বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য মুস্তাক আব্বাস নাকভি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তাঁকেও দেওয়া হয়েছিল নাজমার ছেড়ে যাওয়া সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভার।
মুস্তাক আব্বাস নাকভির রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ৬ জুলাই। তার পর থেকে বিজেপি তাঁকে আর সদস্য করেনি। সেই থেকে মোদির মন্ত্রিসভার দরজাও মুসলিমদের জন্য বন্ধ।
মোদির বিজেপিতে মুসলিমদের যে স্থান নেই, তা সর্বজনবিদিত। এবারের নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন জনসভায় কংগ্রেস ও মুসলিমদের কীভাবে তিনি সমার্থক করে তুলেছেন, তা–ও সবার জানা। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি মুসলিম লিগের ছায়া দেখেছেন। কংগ্রেস অন্যদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে, সে কথাও শুনিয়েছেন। এসব কথা তিনি যখন বলেছিলেন তখন তাঁর ধারণা ছিল না, তাঁর দল নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থেকে ৩২ ধাপ দূরে থমকে যাবে। সরকার গড়ার তাগিদে বাধ্য হয়েই তাঁকে এখন ‘সর্বপন্থা সমভাব’–এর কথা বলতে হচ্ছে। তবে মন্ত্রিসভায় স্থান দেননি একজন মুসলিমকেও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রাজনৈতিক ভাষ্যকারের কথায়, তেমন তাগিদ থাকলে ও ইচ্ছা থাকলে ‘সরকারি’ মুসলিমদের (সরকারপন্থী) মধ্য থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় আনতেই পারতেন। পরে তাঁদের রাজ্যসভা থেকে জিতিয়ে আনা যেত। কিন্তু সেই তাগিদ মোদি কখনো অনুভবই করেননি।
এবারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৭৮ জন মুসলমান প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে জিতেছেন ২৪ জন। এই ২৪ জনের মধ্যে ২১ জনই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের। বাকি তিনজনের একজন হলেন হায়দরাবাদের এআইএমআইএমের আসাউদ্দিন ওয়েইসি। অন্য দুজন কাশ্মীর উপত্যকার দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী রশিদ ও মহম্মদ হানিফা।
এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে মন্ত্রী হয়েছেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে হরদীপ পুরী ও রবনীত সিং বিট্টু শিখ ধর্মাবলম্বী। জর্জ কুরিয়েন খ্রিষ্টান। রামদাস আটওয়ালে ও কিরেন রিজিজু বৌদ্ধ।
২০০৪ ও ২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সময় মুসলিম মন্ত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে চার ও পাঁচজন। তার আগে ১৯৯৯ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন বিজেপির শাহনাওয়াজ হুসেন ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লাহ।
মোদির জমানায় যে বিজেপি নেতা মুস্তাক আব্বাস নাকভির মন্ত্রিত্ব শেষ হয়ে যায়, ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায়ও তিনি মন্ত্রী ছিলেন। সেই দিক থেকে দেখলে এবারের মন্ত্রিসভার শপথ বিরল হয়ে রইল।