সাম্প্রতিক জাতি ও ধর্মীয় সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের জেলা চুড়াচাঁদপুরে যাওয়ার সময় আজ বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর গাড়িবহর আটকে দিয়েছে পুলিশ। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিষ্ণুপুরে রাহুলকে আটকিয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
বিষ্ণুপুর জেলার পুলিশ প্রধান হেইসনাম বলরাম সিং প্রচারমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা রাহুল গান্ধীকে যেতে নিষেধ করেছিলাম, হেলিকপ্টারে চূড়াচাঁদপুর যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। যে সড়ক ধরে রাহুল গান্ধী যাচ্ছিলেন, সেই সড়কে গ্রেনেড হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আমরা তাঁকে অনুমতি দিইনি।’
পরে হেলিকপ্টারে রাহুল গান্ধী ইম্ফল থেকে চুড়াচাঁদপুরে যেতে পারেন বলে জানান কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা।
এদিকে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মণিপুরের ইম্ফলের উত্তরে কাংপোকপি জেলায় গুলি চালানোর একটি নতুন ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে। কাংপোকপি জেলার দুটি গ্রামে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপাল সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর কনভয়কে বিষ্ণুপুরের কাছে পুলিশ থামিয়ে দেয়। পুলিশ বলছে, তারা আমাদের অনুমতি দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। অথচ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে হাত নেড়েছেন স্থানীয় মানুষ। আমরা বুঝতে পারছি না, কেন তারা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে যেতে বাধা দিল।’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং জ্যেষ্ঠ নেতা জয়রাম রমেশও রাহুল গান্ধীকে আটকানোর বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা বলেছেন, মণিপুর সংকটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোনো কথাই বলছেন না। রাহুল গান্ধী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাঁকে বাধা দেওয়া হলো।
জয়রাম রমেশ বলেন: মণিপুরে তাঁর (রাহুল গান্ধীর) দুই দিনের সফর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র চেতনায় উদ্বুদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী নীরব বা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন ঠিকই, কিন্তু রাহুল গান্ধী কেন সমাজের সব অংশের মানুষের কথা শোনা থেকে বিরত থাকবেন?’
মল্লিকার্জুন খাড়গে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, মণিপুরে রাহুল গান্ধীর কনভয় বিষ্ণুপুরের কাছে পুলিশ থামিয়েছে। তিনি সেখানে যাচ্ছিলেন ত্রাণশিবিরে ভুক্তভোগী মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে এবং সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত রাজ্যের পাশে দাঁড়াতে। মণিপুরকে প্রধানমন্ত্রী ত্যাগ করেছেন। মণিপুর নিয়ে নীরবতা তিনি এখনো ভাঙেননি।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
বিজেপি এই খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কংগ্রেসকে রাজ্যের সংবেদনশীল পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে বলেছে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, তুচ্ছ রাজনৈতিক লাভের জন্য ‘একগুঁয়ে’ হওয়ার চেয়ে সংবেদনশীল পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন।
বিজেপিবিরোধী শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর সাংসদ সঞ্জয় রাউত ইতিমধ্যে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করেছেন যে রাহুল গান্ধীর মণিপুর সফর একটি ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’। সম্প্রতি শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কের অবনতির পর বিজেপিবিরোধী মহারাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দলের মণিপুর প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়ানো ভারতের রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সঞ্জয় রাউত আরও বলেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মণিপুরে গিয়েছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এখনো পর্যন্ত মণিপুর সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি।
সঞ্জয় রাউত বলেন, চীন মণিপুরের ঘটনায় জড়িত থাকায় মণিপুরের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এই প্রথম ভারতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দলের প্রভাবশালী নেতা মণিপুর প্রসঙ্গে চীনের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনার কথা বললেন।