ভারতে বিলকিস বানুকে ধর্ষণকারীদের আরজি নামঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তাই মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে আগামী রোববারের মধ্যে কারাগারে যেতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ আজ শুক্রবার এই নির্দেশ দেন।
বিলকিস বানুকে ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যকে হত্যাকারী ওই ১১ অপরাধীর মধ্যে ১০ জন আত্মসমর্পণ করার মেয়াদ এক থেকে দেড় মাস বাড়িয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।
আবেদন খারিজ করে আদালত বলেন, আত্মসমর্পণ করার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য তেমন কোনো জোরালো ও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দেখানো হয়নি। সবাইকে রোববারের মধ্যেই কারাগারে ফিরে যেতে হবে।
ওই ১১ জন অপরাধীকে গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই রাজ্যের কারাগার থেকে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়। গুজরাট সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়। বিলকিস বানুও মামলা করে জানিয়েছিলেন, মুক্তির খবর তাঁকে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার রায় দেন ৮ জানুয়ারি। তাতে বলা হয়েছিল, মুক্তিদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতাই গুজরাট সরকারের নেই। কারণ, মামলার বিচার হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। মহারাষ্ট্র সরকারই সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযুক্ত। রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট এই কথাও বলেছিলেন, মুক্তির আবেদনে তথ্য গোপন করা হয়েছিল। অপরাধীদের আত্মসমর্পণের জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। ২১ জানুয়ারি, রোববার সেই সময়সীমা শেষ হবে। সেই দিনের মধ্যেই অপরাধীদের জেলে যেতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার ওই ১১ অপরাধীর মধ্যে ১০ জন সুপ্রিম কোর্টে আত্মসমর্পণের সময় এক থেকে দেড় মাস বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন। বিচারপতি নাগরত্না ও বিচারপতি ভুঁইয়ার এজলাসে তাঁরা দ্রুত আবেদনটি শোনার আরজি জানান। আরজিটি গ্রহণ করে বিচারপতিরা বলেন, প্রধান বিচারপতির সায় পেলেই তা শোনা হবে।
শুক্রবার শুনানি শেষে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেন, যে ধরনের কারণ দেখিয়ে সময় বাড়ানোর আরজি জানানো হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আবেদনে কেউ বলেছিলেন, এটা ফসল কাটার সময়। সে জন্য পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। কারও দাবি, বৃদ্ধ মা–বাবাকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে; কেউ পারিবারিক সমস্যা, কেউ আবার চিকিৎসার কারণ উল্লেখ করেছিলেন। কেউ বলেছিলেন, পরিবারে বিয়ে আছে। কারও আরজি ছিল এক মাস সময় বাড়ানোর, কারও দেড় মাস।
২০০২ সালে গোধরা দাঙ্গার সময় ২১ বছর বয়সী বিসকিস বানু ওই ১১ জনের ধর্ষণের শিকার হন। তখন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ওই অপরাধীরা বিলকিসের শিশুকন্যাসহ তাঁর পরিবারের সাতজনকে হত্যাও করেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সাজা পেয়েছিলেন ওই অপরাধীরা। তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ১৪ বছর কারাবাসের পর গুজরাট সরকার পুরোনো এক নীতি অনুযায়ী ওই অপরাধীদের মুক্তি দেয়। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে।