ভারতে আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সরকারের সঙ্গে চতুর্থ দফার আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর পাঞ্জাব–হরিয়ানার শম্ভু সীমান্তে জড়ো হওয়া কৃষকেরা আজ বুধবার সকাল থেকে নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করেন। গন্তব্য ২০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী দিল্লি।
পাঞ্জাব-হরিয়ানার খানাউরি সীমান্তে ২৪ বছর বয়সী ওই কৃষক পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাত পান। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে ট্রাক, ট্রাক্টর, বাস, বুলডোজারসহ আগুয়ান কৃষকদের রুখতে হরিয়ানা পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। লাউড স্পিকারে ক্রমাগত বলতে থাকে শান্তি বজায় রাখতে। হরিয়ানা পুলিশ এই হুমকিও দেয়, বুলডোজার ও আর্থ মুভার নিয়ে অভিযানে শামিল হলে কৃষকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষক সংগঠনগুলো সেই হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করেছে। কাঁদানে গ্যাসের শেল থেকে নিজেদের বাঁচাতে অনেককে গ্যাস মুখোশ পরতে দেখা যায়। প্রত্যেকের কাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পানির বোতল।
চতুর্থ দফার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার বিস্মিত। সরকার মনে করছে, তাদের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পেছনে সংযুক্ত কিসান মঞ্চ বা ‘এসকেএম’ আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলোর হাত রয়েছে। সরকার যে নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ডাল, ভুট্টা ও তুলা চাষের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির নিশ্চয়তা দিয়েছিল, এসকেএম তাঁদের প্রভাবিত করেছে আগেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সরকার ভেবেছিল, আলোচনাকারী নেতারা ওই প্রস্তাব মেনে নেবেন। কারণ, তাঁরাও সরকারের মতো জমির উর্বরতা ও জলস্তর কমে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। সরকারের মনে হয়েছিল, ধান ও গমের বিকল্প ফসল উৎপাদনে কৃষকনেতারা আগ্রহী। কিন্তু এসকেএম তা বানচাল করে দেয়।
সরকার মনে করছে, আন্দোলনকারী নেতাদের ওই প্রস্তাবে রাজি করানো গেলে সেটা হতো তাদের রাজনৈতিক জয়। দিল্লি চলো অভিযান বন্ধ করা যেত। কৃষক ঐক্যেও ফাটল ধরানো যেত।
হয়েছে তার বিপরীত। পশ্চিম উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বুধবার ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) সদস্যরা সরকারি অফিস অবরোধ করেন। কৃষকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের প্রতিবাদ জানান। আন্দোলনকারী কৃষকেরা আজ হরিয়ানার বিভিন্ন জাতীয় সড়কের টোল প্লাজা দখল করে নেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, আগামী তিন দিন ওই সড়কপথের যাত্রীরা বিনা টোলে যাতায়াত করতে পারবেন।
দিল্লি চলো অভিযান নতুন করে শুরু হওয়ায় হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকার মতো দিল্লি সীমান্তেও পাহারা বাড়ানো হয়েছে। টিকরি, সিংঘু, গাজীপুর, নয়ডাসহ অন্যান্য সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে জলকামান ও দাঙ্গা রোধকারী পুলিশ। রাস্তা আটকে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে নানা ধরনের ব্যারিকেড। আলোচনার জন্য অভিযান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত সরকারকে স্বস্তি দিয়েছিল। আজ থেকে ফের সীমান্তগুলোয় তৎপরতা বেড়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের ব্যারিকেড এমনভাবে বসানো হয়েছে, যা হটিয়ে কৃষকদের দিল্লি প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বুলডোজার ও আর্থ মুভারের উপস্থিতি নিরাপত্তারক্ষীদের চিন্তায় রেখেছে। হরিয়ানা ও কেন্দ্রীয় সরকারি হিসাবে শম্ভু সীমান্তে লাখখানেক কৃষক জড়ো হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা কৃষকনেতাদের নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। আজ মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা বলেন, ‘আমি সব সংগঠনকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আলোচনার মধ্য দিয়েই আমাদের সমাধানে পৌঁছাতে হবে। তাই আলোচনায় যোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। জানতে পারলাম কৃষকনেতারা তাতে সন্তুষ্ট নন। আমরা এ আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাই। শান্তিপূর্ণভাবেই আমাদের সমাধান খুঁজতে হবে।’
সরকার যে প্রস্তাব দিক, কৃষকনেতারা এমএসপির আইনি বৈধতার দাবিতে অনড়। আজও তাঁরা জানিয়েছেন, ২৩টি ফসলের এমএসপি নিশ্চিত করা তাঁদের প্রধান দাবি। ওই সূত্রে বলা হয়েছে, চাষের সব ধরনের উপকরণ খরচ যেমন বীজ, সার, পানি, বিদ্যুতের সঙ্গে পরিবারের সবার শ্রমের মূল্য ধরে মোট উৎপাদন খরচ যা হবে, তার সঙ্গে আরও ৫০ শতাংশ যুক্ত করলে যা দাঁড়াবে, সেটাই হবে এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। সেটাই সরকারকে আইনি বৈধতা দিতে হবে। কৃষকনেতারা সরকারকে জানিয়ে দেন, তাঁরা ২৩টি পণ্যেরই এমএসপি চান। শুধু ডাল, ভুট্টা ও তুলার জন্য নয়।