পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ডিভিসির (দামোদর ভ্যালি করপোরেশন, বহুমুখী নদী উপত্যকা প্রকল্প) বাঁধ থেকে বিনা অনুমতিতে পানি ছেড়ে দেওয়ায় এই রাজ্যের আটটি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষেত।
ডিভিসির আওতাধীন বাঁধ থেকে বিনা অনুমতিতে পানি ছাড়ায় ডুবে গেছে এই রাজ্যের আটটি জেলার বিস্তৃীর্ণ এলাকা। এসব জেলা হলো পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, বাঁকুরা, পূর্ব মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান।
মমতা এই বন্যাকে ‘ম্যান মেড বন্যা’ হিসেবে দাবি করে দুই দফায় চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। কেন্দ্রীয় সরকার এই চিঠির পর জানিয়ে দিয়েছে, ডিভিসির বিভিন্ন বাঁধের পানি ছাড়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে।
গতকাল রোববার পাঞ্চেত ও মাইথন বাঁধ থেকে ছাড়া হয়েছে ৪২ হাজার কিউসেক পানি। সেই পানি গিয়ে পড়েছে দুর্গাপুর বাঁধের জলাধারে। সেখান থেকে গতকালই ছাড়া হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০০ কিউসেক পানি।
মমতা এই পানি ছাড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকারান্তরে মোদি সরকারের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন। ডিভিসির কমিটিতে থাকা এই রাজ্যের দুই প্রতিনিধি ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু ও সেচ দপ্তরের একজন প্রকৌশলী।
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ও ডিভিসির বাঁধ থেকে এই পানি ছাড়ার ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে এই রাজ্যের আট জেলায়। মমতা দুর্গত জেলা সফর করে বানভাসীদের সার্বিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন। খুলেছেন ত্রাণের শিবির।
তবে এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই বন্যার কারণে ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করায় কার্যত এই রাজ্যের ৯ জেলা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে পড়বে। কারণ, এসব বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এই রাজ্যের এসব জেলায় আসত। মমতাও সম্প্রতি এই বন্যা সৃস্টির জন্য ঝাড়খন্ড রাজ্যের বাঁধকে দায়ী করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝাড়খন্ডের সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছিল।
ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি করপোরেশন হলো স্বাধীন ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী উপত্যকা প্রকল্প। ১৯৪৮ সালের ৭ জুলাই ভারতের গণপরিষদে আইনবলে গড়া হয়েছিল এই ডিভিসি প্রকল্প। এটি গড়া হয়েছিল যুক্তরাস্ট্রের টেনিসি ভ্যালি অথরিটির আদলে। আর এটি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিনহা। তখন অবশ্য বিহার রাজ্য ভাগ হয়ে ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠিত হয়নি। সে সময় লক্ষ্য ছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ; সেচ কাজ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ; পরিবেশ সংরক্ষণ; বন সৃজন ও আশপাশ এলাকায় বসবাসকারী মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন।
এই লক্ষ্যে তিলওয়াত এলাকায় দামোদর নদীর বাঁধ, কোনারে দামোদর নদী, মাইথনে বরাকর নদী ও পাঞ্চেতে দামোদর নদীর ওপর চারটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর তেনুঘাট ও দুর্গাপুরে আরও দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এসব এখন দামোদর ভ্যালি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রাধীন। মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগ, এসব বাঁধ থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জলাধার থেকে পানি ছাড়ায় পশ্চিমবঙ্গে বন্যা দেখা দিয়েছে।