ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকাকে আলাদা রাজ্য করার দাবি উঠেছে। উত্তর–পূর্ব ভারতের এই উপত্যকার জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি তুলেছে আসামের প্রভাবশালী গণসংগঠন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ)।
গত বুধবার ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আসামের ১৪টি সংসদীয় (লোকসভা) এবং ১৪টি বিধানসভা আসনের জন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণে (ডিলিমিটেশন) নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে সম্মতি দেন। ভারতের কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলল বিডিএফ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর আসামের বাংলাভাষী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার আসনসংখ্যা কমে গেছে। এত দিন বরাক উপত্যকায় বিধানসভা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আসনসংখ্যা বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সীমানা পুনর্নির্ধারণের পরে তা কমে হয়েছে ১৩।
এই প্রক্রিয়াকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিডিএফ। তারা বলছে, আসাম বিধানসভায় বাঙালি প্রতিনিধির সংখ্যা কমানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আপত্তি জানালেও কোনো লাভ হয়নি।
বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্ত রায় বলেছেন, ‘সীমানা পুনর্নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালে, সেখানে ২০২৩ সালে তা তড়িঘড়ি করে করা হলো। আর এটা করা হয়েছে ২০০১ সালের আদমশুমারির ওপরে ভিত্তি করে। আমরা আশা করেছিলাম, ২০১১-এর আদমশুমারির ভিত্তিতে করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। এটা কেন করা হলো না, তা একটা রহস্যজনক বিষয়।’
২০২১ সালের আদমশুমারির তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এই আদমশুমারির ভিত্তিতেই ভারতের পরবর্তী অর্থাৎ ২০২৬ সালের জাতীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ হওয়ার কথা বলে জানান প্রদীপ দত্ত রায়।
প্রদীপ দত্ত রায় অভিযোগ করেন, ১৯৮০ সালে আসামে বাঙালি তাড়ানোর আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিদের হেনস্তা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘বেছে বেছে বাঙালিদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, আধার কার্ড (পরিচয়পত্র) আটকে রাখা হচ্ছে, বন্দিশিবিরে (ডিটেনশন ক্যাম্প) পাঠানো হচ্ছে। এখন সীমানা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে বিধানসভায় আসন কমিয়ে দেওয়া হলো। এই অবস্থায় বিডিএফের সব কর্মকর্তা ও সদস্য একমত যে আসামের সঙ্গে থাকার আর কোনো যৌক্তিকতাই নেই।’
বিডিএফ সদস্যদের দাবি, তাঁদের জন্য ৬০ আসনের পৃথক বিধানসভা করতে হবে। সেই রাজ্যের নাম হবে পূর্বাঞ্চল। এই দাবি আদায়ে বরাকের সব দল ও সংগঠন নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আসামের মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলোতেও উদ্বেগ বেড়েছে। এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের মুসলমান সম্প্রদায়কে আরও প্রান্তিক করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা এর আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সমর্থনে বলেছিলেন, ‘আসাম অপরিচিত ব্যক্তিদের হাতে যাওয়া উচিত নয়। জাতি ও মাটি রক্ষার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে কাজ করেছি, যাতে আমাদের জনগণের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা রাখা যায়।’
সীমানা পুনর্নির্ধারণে রাষ্ট্রপতির সম্মতিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। কংগ্রেস আসামে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিরোধিতা করেছে।