ভারতের মণিপুর রাজ্যে একটি ভিডিও চিত্রকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সাত সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, কালো শার্ট ও ক্যামোফ্লেজ প্যান্ট পরা এক ব্যক্তিকে। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন, তিনি একটি কাঁটাতারের কাছে পড়ে আছেন। সেই অবস্থায় তাঁর শরীরের একটি অংশ পুড়ে যাচ্ছে। কিছু মানুষকে তাঁর কাছে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছেন। দূরে গুলির শব্দও শোনা যাচ্ছে।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই মণিপুর সরকার গতকাল সোমবার জানিয়েছে, এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে ফেলার ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছিল মে মাসের প্রথম দিকে। ঘটনাটি ঘটেছিল কুকি-অধ্যুষিত কাংপোকপি জেলায়।
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং দাবি করেছেন, ঘটনাটি আগে ভাইরাল হওয়া দুই কুকি নারীর ভিডিওর সঙ্গে সম্পর্কিত। ওই নারীদের নগ্ন করে রাস্তায় প্যারেড করানো হয় এবং পরে ধর্ষণ করা হয়। সেই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল মে মাসের গোড়ার দিকে, সহিংসতা শুরুর পরপরই।
কুকি নারীদের নিয়ে সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মনিপুর। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। গত আগস্টে মামলার তদন্ত সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়।
সাম্প্রতিক ভিডিওর ক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার নয়, মৃত ওই ব্যক্তিকে জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, নাকি পোড়ানোর আগেই সে মারা গিয়েছিল। কুলদীপ সিংয়ের দাবি, ওই ব্যক্তির নাম (ভিডিওতে) লালদিনথাঙ্গা খংসাই, বয়স ৩৭ বছর। তিনি কাংপোকপি জেলার পাওকংচিং গ্রামের বাসিন্দা।
কুলদীপ বলেছেন, নিহত ব্যক্তি কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁর মৃতদেহ এখন ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের মর্গে রয়েছে।
কুলদীপ বলেন, ‘রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে এই মামলাটি সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করার অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ, এই মামলাটিকেও আমরা সেই ঘটনার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছি, যেখানে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল এবং দুই নারীকে নগ্ন করে প্যারেড করানো হয়েছিল।’
এক ব্যক্তিকে পোড়ানোর দৃশ্যসংবলিত সাম্প্রতিক ভিডিও সম্পর্কে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের ফোরাম (আইটিএলএফ) বলেছে, এই ঘটনা ‘মর্মান্তিক ও বর্বর’। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন ঘটনাকে সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন করে বিচার করা হচ্ছে।
আইটিএলএফ গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ভিডিওটি কুকি-জো সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূল করার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের অভিযানের একটি যন্ত্রণাদায়ক প্রমাণ।
চলতি বছরের ৩ মে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। এই সহিংসতায় ১৭৫ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক শ আহত হয়েছেন। বাস্তুহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। তফসিলি উপজাতি হিসেবে মর্যাদার প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবিকে বিবেচনা করার মণিপুর হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই মে মাসে রাজ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রতিবাদ বিক্ষোভ একসময় সহিংসতায় রূপ নেয়। এই সহিংসতা প্রায় ছয় মাস পরে এখনো পুরোপুরি থামেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনো মনিপুরের সহিংসতার আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা ভারতের পার্লামেন্টে দেননি, তিনি মনিপুর পরিদর্শনেও যাননি।