বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে ফেরত দেওয়া হবে বলে আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় জানিয়েছেন দেশটির আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ইডি নিয়োজিত আইনজীবী। ধরা পড়ার পর এখন কলকাতায় বন্দী আছেন পি কে হালদার। সেখানে তাঁর বিচার চলছে।
গত মে মাসে পি কে হালদার ও তাঁর আরও পাঁচ সহযোগীকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগর থেকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
আজ কলকাতার এক বিশেষ আদালত পি কে হালদারসহ ৬ জনকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। তাঁদের জেল হেফাজতের মেয়াদ আরও ৫৬ দিন বাড়ানো হয় আজ। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের ৪ নম্বর আদালতের বিচারপতি বিদ্যুৎ কুমার রায় এই হেফাজত বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
আজ পি কে হালদার এবং তাঁর সহযোগীদের আদালতে পেশের পর একটি সূত্রের মাধ্যমে ইডি জানায়, এ মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছে ইডি। সূত্রটি জানিয়েছে, পৃথক আর কোনো চার্জশিট (সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট) দেওয়া হবে না। মামলাটির শুনানি ও রায় দেওয়ার পর পি কে হালদারসহ বাকিদের বাংলাদেশে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।
আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যেই যাতে তাঁদের ফেরানো যায়, সে চেষ্টাও করা হবে বলে ওই সূত্রটি জানায়। তাদের বলা হয়েছে, মামলাটিকে দ্রুত ভারতে নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যেতে।
মামলায় যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁরা সাজার মেয়াদ কিছুটা ভারতে পূর্ণ করবেন। তারপর তাঁদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তাঁরা সাজার বাকি মেয়াদ বাংলাদেশে পূর্ণ করতে পারেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ঠিক কী প্রক্রিয়ায় এটা করা হবে, সে সম্পর্কে অবশ্য ইডির সূত্রটি কিছু জানাতে পারেনি। ইডির সূত্র শুধু বলে, ভারতে এই মামলাটির খবরের কাগজে ওঠার মতো আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
এখন পর্যন্ত হালদার তাঁর তরফে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি। যদিও মামলাটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আইনজীবীদের মধ্যে জল্পনা চলছে, কারণ, যাঁকেই হালদার নিয়োগ করবেন, তিনি বড় অঙ্কের অর্থ হালদার পরিবারের থেকে চাইবেন। মনে করা হচ্ছে, মামলাটির শুনানি শুরু হলে তখন আইনজীবী নিয়োগ করবেন হালদার।
পি কে হালদার ছাড়াও গ্রেপ্তার হন তাঁর ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার, যিনি উত্তর চব্বিশ পরগনায় পি কে হালদারের জমিজমা, বাড়ি ও মাছের ভেড়ির ব্যবসা আংশিকভাবে দেখাশোনা করতেন। এ ছাড়া আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদারসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার হন।
ইডি পরবর্তী তিন মাসে তাঁদের ভারতে প্রচুর সম্পত্তির হদিস পায়। যার মধ্যে ছিল একাধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, অর্থ এবং বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগসংক্রান্ত কাগজপত্র। মালয়েশিয়া, দুবাই ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও সম্পত্তির হদিস মেলে। তাঁর একাধিক পাসপোর্টেরও হদিস পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ৮০ কোটি টাকা।