কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে আনা কানাডার যাবতীয় অভিযোগ অবাস্তব ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে ভারত। গতকাল শুক্রবার কানাডা হাইকমিশনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে ওই অভিযোগের বিষয়ে এক প্রতিবাদপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, অত্যন্ত কড়া ভাষায় লেখা ওই প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, কানাডার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডেভিড মরিসন সে দেশের সংসদীয় কমিটিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যা বলেছেন, তা অবাস্তব ও ভিত্তিহীন। এ ধরনের মিথ্যাচার দুই দেশের সম্পর্কে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রণধীর জয়সোয়াল বলেন, অমিত শাহর নির্দেশে কানাডায় খালিস্তানিদের ওপর হামলা ও ভীতি প্রদর্শন হচ্ছে বলে ডেভিড মরিসন সে দেশের সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছিলেন। অবাস্তব অভিযোগের খবর তিনিই বিদেশি সংবাদপত্রকে (ওয়াশিংটন পোস্ট) জানিয়েছিলেন বলে স্বীকারও করেছেন।
এই আচরণ কানাডার ‘সচেতন কৌশল’ বলে অভিহিত করে জয়সোয়াল বলেন, অন্য দেশের কাছে ভারতকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। তিনি বলেন, কানাডার বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ নিয়ে ভারত শুরু থেকেই যা বলে আসছে, এই আচরণ তা সত্য প্রমাণিত করছে। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
কানাডায় বসবাসকারী খালিস্তানি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যার অভিযোগে জাস্টিন ট্রুডো সরকার সরাসরি ভারতের যোগসাজশের অভিযোগ আনেন। সেই অভিযোগ শুরু থেকেই ভারত অস্বীকার করে চলেছে। কানাডা চাইছে, ভারত নিজ্জর হত্যার তদন্তে সহযোগিতা করুক, ভারত বলছে তার আগে কানাডা অভিযোগের প্রমাণ দিক। কানাডা বলছে, তারা অনেক প্রমাণ তুলে দিয়েছে, ভারত বলেছে কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি। ভারত মনে করে, এ অভিযোগ পুরোপুরি রাজনৈতিক। এই বিতর্কের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।
এই বিতর্কের রেশ ধরে ভারত সে দেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে ফিরিয়ে এনেছে। কানাডার হাইকমিশনারও দেশে ফিরে গেছেন। দুই দেশই কমিয়ে দিয়েছে দূতাবাসকর্মীদের সংখ্যা। আগামী বছর সে দেশের সংসদীয় নির্বাচনে এ অভিযোগের প্রভাব কতটা পড়ে, ট্রুডো সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে দুই দেশের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি।
খালিস্তানপন্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে ভারত সরকার। দেশটি তার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খালিস্তানপন্থীদের ‘হুমকি’ বলে মনে করে। শিখ আন্দোলনকারীরা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খালিস্তান নামে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে বিদ্রোহ চলাকালে শিখ সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৮৪ সালে শিখবিরোধী দাঙ্গার ঘটনাও আছে।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর শিখ দেহরক্ষীর হাতে খুন হওয়ার পর সেই দাঙ্গা হয়েছিল। খালিস্তানপন্থী শিখ আন্দোলনকারীদের উৎখাত করতে পবিত্র শিখ মন্দিরে অভিযান চালানোর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধী হত্যার শিকার হন।