ভারতের দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার বাড়িতে এবার তল্লাশি চালিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। আজ শুক্রবার সকালে উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়িসহ সাত রাজ্যের মোট ২১টি স্থানে তল্লাশি শুরু হয়। দিল্লি সরকারের নতুন আবগারি নীতিতে দুর্নীতির অভিযোগে এ তল্লাশি। দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাকসেনা সম্প্রতি দুর্নীতি উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা সিসোদিয়া রাজ্যের শিক্ষা ও আবগারি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সিবিআই মদের মামলায় যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে, তার মধ্যে এক নম্বরে সিসোদিয়া। এর আগে পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধী নেতাদের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই।
তল্লাশি শুরু হতেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘কোনো তল্লাশিই তাঁর সরকারকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। দেশের গরিবদের মঙ্গলের জন্য যা কিছু করা উচিত, আপ সরকার করে যাবে, যতই বাধা সৃষ্টি করা হোক।’
কেজরিওয়াল বলেন, ‘অতীতেও এমন বহু তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিছুই পাওয়া যায়নি। এবারও কিছু পাওয়া যাবে না। আমরা সিবিআইয়ের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’ সিসোদিয়াও সাতসকালে টুইট করে বলেন, ‘বাড়িতে সিবিআই এসেছে। ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করব। ওরা কিছুই পাবে না।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটি ক্ষেত্রে দিল্লি সরকার চমৎকার কাজ করছে। সেই কারণে বিজেপি বিচলিত। তাই এ দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের নিশানা করা হয়েছে।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন কারাগারে। রাজ্য সরকারের নতুন আবগারি নীতি নিয়ে হইচই শুরু হলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, এবার মনীশ সিসোদিয়া আতশ কাচের তলায় আসতে চলেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট প্রকাশিত ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনের ছবি প্রকাশ করে কেজরিওয়াল বলেন, ‘যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ সংবাদপত্রে দিল্লির শিক্ষাব্যবস্থার প্রশংসা করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো, সেদিনই বিচলিত বিজেপি সিবিআই তল্লাশির নির্দেশ দিল। আমরা তাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আগেও তল্লাশি হয়েছে। কিছু পায়নি। এবারও পাবে না।’
আপ নেতা রাঘব চাড্ডাও সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে সিবিআই মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল। চারটি মাফলার ছাড়া কিছু পায়নি। এবার সিসোদিয়ার বাড়ি থেকে পেনসিল, বই-খাতা ও জ্যামিতি বাক্স ছাড়া অন্য কিছু পাবে না।’
কংগ্রেস দিল্লিতে আম আদমি পার্টির বিরোধী। তবে এই সুযোগে তারা বিজেপি ও আপ দুই দলেরই সমালোচনা করতে ছাড়েনি। দলীয় মুখপাত্র পবন খেরা বলেছেন, ‘বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরামহীন অভিযান তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এনে ফেলেছে। এতটাই যে ন্যায্য ও যথার্থ তদন্তও এখন সন্দেহজনক ঠেকছে।’
নতুন আবগারি নীতির মধ্যে দিল্লি সরকার মদ ব্যবসা থেকে সরে আসে। এ নীতিতে দিল্লিকে ৩২টি এলাকায় ভাগ করে একটি অঞ্চল নিলামে তোলা হয়। এই বেসরকারীকরণের মধ্য দিয়ে সরকার দুই হাজার কোটি রুপি বাড়তি রাজস্ব আদায় করবে ভেবেছিল।
রাজ্যের নতুন আবগারি নীতি নিয়ে দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপরাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে উপরাজ্যপাল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। ৬ আগস্ট সিসোদিয়া অভিযোগ করে বলেছিলেন, আবগারি নীতি নিয়ে তদন্ত হলে সাবেক উপরাজ্যপাল অনিল বৈজালকেও তার আওতায় আনতে হবে। তখন থেকেই আপ নেতৃত্ব সিবিআই তল্লাশির জন্য প্রস্তুত। গতকাল সকালে যা বাস্তবায়িত হয়।
নতুন আবগারি নীতির মধ্যে দিল্লি সরকার মদ ব্যবসা থেকে সরে আসে। এ নীতিতে দিল্লিকে ৩২টি এলাকায় ভাগ করে একটি অঞ্চল নিলামে তোলা হয়। এই বেসরকারীকরণের মধ্য দিয়ে সরকার দুই হাজার কোটি রুপি বাড়তি রাজস্ব আদায় করবে ভেবেছিল। কিন্তু অভিযোগ, তা করতে গিয়ে রাজ্য সরকার গোটা দিল্লিকে ছয়জন বড় মদ ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়, যারা বিপুল বাড়তি মুনাফার একাংশ পার্টিকে দিয়েছে। এই এক মডেল আম আদমি পার্টির সরকার চালু করেছে পাঞ্জাবেও। দিল্লিতে সিবিআই তল্লাশির ফলে পাঞ্জাবের আপ সরকারও তাই চিন্তিত।
দিল্লির আবগারি নীতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় গত জুলাই মাসে আপ সরকার আবার পুরোনো নীতিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার মদ ব্যবসায় শরিক হবে। নয়া নীতিতে দিল্লির মদের দোকানগুলো সুসজ্জিত অত্যাধুনিক বিপণিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। মদের দাম কমে গিয়েছিল প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায়। মদ্যপায়ীদের পছন্দের পরিধিও বেড়ে গিয়েছিল।