ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন

ইসরায়েলকে ভারতের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন

ভারতের বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা, সমাজকর্মী এবং খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ইসরায়েলে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া লাইসেন্স বাতিল এবং নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন।

বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণে মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার বার সুপ্রিম কোর্টে আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখার্জি, কূটনীতিবিদ অশোককুমার শর্মা, সাবেক কেন্দ্রীয় আমলা মিনা গুপ্তা, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ, শিক্ষাবিদ অচিন বিনায়ক, সমাজকর্মী হর্ষ মন্দার, নিখিল দে, ফিরোজ মিঠিবোরয়ালাসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ভারতীয় নাগরিক এই পিটিশন দাখিল করেছেন।

পিটিশনে বলা হয়েছে, গাজায় অবরোধের সময় ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের চলমান রপ্তানি ভারতের সংবিধানের ১৪ এবং ২১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে, যেখানে সমান অধিকার এবং জানমালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ করে বলা হয়েছে, ভারতের উচিত ‘অবিলম্বে ইসরায়েলকে দেওয়া সাহায্য স্থগিত করা।’ বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জামসহ অন্যান্য সামরিক সহায়তা। গণহত্যা সনদ, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন বা সাধারণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে এই সামরিক সহায়তা ইসরায়েলের সুবিধা করে দিচ্ছে; সুতরাং এই সহায়তা বন্ধ রাখা উচিত।

ইসরায়েল যাতে ইতিমধ্যেই দেওয়া সরবরাহ ব্যবহার করে গণহত্যা চালাতে না পারে বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে না পারে, সেদিকেও ভারতের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত বলে আবেদনকারীরা মনে করছেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, একটি দেশ যাতে অন্যের ওপরে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করতে না পারে, তা দেখার জন্য যে নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে, সেই আইন মোতাবেকও ভারত এই অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে না।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদ (ভারত স্বাক্ষরকারী দেশ) অধীন গণহত্যা প্রতিরোধ করতে নিজস্ব ক্ষমতার মধ্যে সব ব্যবস্থা নিতে ভারত বাধ্য বলে মন্তব্য করা হয়েছে আবেদনে। এতে বলা হয়, গণহত্যা সনদের তিন ধারায় বলা হয়েছে, ‘গণহত্যায় রাষ্ট্রের জড়িত থাকা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

আবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ২১ ধারা অনাগরিকদের জন্য অর্থাৎ অন্য দেশের মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুকে সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে এবং এই হামলা চালাতে প্ররোচিত করছে। সেই কারণে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারের আওতায় আসে।’

পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল; কিন্তু ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধবিরতি এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে যে প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করা হয়েছিল, তাতে ভোটদানে ভারত বিরত ছিল।

বিষয়টি ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা চলছে, তা নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।