আম আদমি পার্টির (আপ) নেত্রী ও দিল্লির মন্ত্রী আতিশীর শঙ্কা, বিজেপির নির্দেশে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবার তাঁকেও গ্রেপ্তার করবে। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘বিজেপিতে যোগ না দিলে ইডি আমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এক মাসের মধ্যে আটক করে হেফাজতে নেবে।’ তিনি বলেন, রামলীলা ময়দানের সমাবেশ দেখে ভীত বিজেপি এবার তাঁদেরও গ্রেপ্তার করবে।
আতিশী নিজের গ্রেপ্তারের কথা বলার পাশাপাশি জানিয়েছেন, আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ, দুর্গেশ পাঠক ও রাঘব চাড্ডাকেও তুলে নেওয়ার ছক কষছে ইডি। তাঁর কথায়, ওরা ভেবেছিল, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বন্দী করলে আপ চুরচুর ভেঙে পড়বে। কিন্তু তা না হওয়ায় এবার আমাদের তুলে নিতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে।’
আতিশীর এই শঙ্কার কারণ ইডি সূত্রে কিছু ‘তথ্য’ সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছে ইডি। এ অভিযোগ তারা আদালতেই করেছে। কিন্তু তাদের সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম খবর করেছে, কেজরিওয়াল নাকি তদন্তকারী অফিসারদের বলেছেন, আপের জনসংযোগকারী কর্তা বিজয় নায়ার তাঁকে কোনো কিছুই জানাতেন না, যা কিছু জানানোর, তা জানাতেন মন্ত্রী আতিশী ও সৌরভ ভরদ্বাজকে।
আতিশীর শঙ্কা, ইডি কৌশলে এ খবর দেওয়ার মাধ্যমে দুটি কাজ করতে চাইছে। কেজরিওয়ালের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বৃদ্ধি করা ও তাঁদের গ্রেপ্তার। এটা তারা করতে চাইছে, যাতে ভোটের আগে আপ নেতাহীন হয়ে যায়। কারণ, বিজেপি দেখেছে, কেজরিওয়ালকে জেলে পুরলেও আপ একই রকম চনমনে রয়েছে। রামলীলা ময়দানের সমাবেশ দেখে ভীত বিজেপি এখন তাই অন্যভাবে ঘুঁটি সাজাতে চলেছে।
আতিশী আরও এক গুরুতর অভিযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দিন কয়েক আগে তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মাধ্যমে তাঁকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘বাঁচতে চাইলে আমি যেন বিজেপিতে যোগ দিই। তাতে আমার রাজনৈতিক জীবন এগিয়ে চলবে। যদি তা না করি, তা হলে একমাসের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।’ তিনি বলেন, তাঁকে একজন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আপের শীর্ষ নেতাদের সবাইকে জেলে পাঠাবেন বলে ঠিক করেছেন।
দিল্লির দুই সাবেক মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন, মণীশ সিসোদিয়া এবং রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং আপাতত জেলে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে তিহারবাসী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিজেপি এবার তাঁর সঙ্গে সৌরভ ভরদ্বাজ, দুর্গেশ পাঠক ও রাঘব চাড্ডাকেও গ্রেপ্তারের তোড়জোড় করছে বলে আতিশী সরাসরি জানিয়ে দেন।
কীভাবে সেটা করা হবে, সেই আভাসও আতিশী দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘প্রথমে আমার ও আমার আত্মীয়দের বাড়ি ইডি তল্লাশি চালাবে। তারপর সমন পাঠাবে। তারপর গ্রেপ্তার করবে।’ তিনি বলেন, ‘ছকটা স্পষ্ট। বিজেপিতে গেলে বাঁচব, না হলে জেলে পচব। ভাগ্যে যা–ই থাকুক, আপ ছেড়ে অন্য কোনো দলে যাব না। কোনো ধমকিতে আমরা ভয় পাই না। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেই থাকব। আমাদের গ্রেপ্তার করলে অন্য দশ জন আমাদের জায়গা নেবে। কেজরিওয়ালের লড়াইয়ে যোগ দেবে। দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা করবে।’
বিজেপির দিল্লি প্রদেশের নেতারা আতিশীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কেজরিওয়াল যা বলেছেন, ইডি তা আদালতে পেশ করেছে। বিজেপি নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা বলেন, আতিশী এভাবে জনতাকে বোকা বানাতে চাইছেন। আসল কথা, আপে ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আতিশীর জেনে রাখা ভালো, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিজেপি দলে টানে না। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র হরিশ খুরানা বলেন, আতিশীর বিরুদ্ধে দল অভিযোগ জানাবে। আতিশী অনর্থক উত্তেজনা ছড়াতে চাইছেন।