শান্তিনিকেতনের বাড়ি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। আজ শনিবার গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠান তিনি। সম্প্রতি শান্তিনিকেতনের বাড়ি মাপজোখের যে ইচ্ছা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে, তারই উত্তর দিয়েছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন।
বিবৃতিতে অমর্ত্য সেন লিখেছেন, ‘খবরের কাগজে পড়লাম যে বিশ্বভারতীর কর্মকর্তারা মাপজোখের জন্য তাঁদের ‘‘সুবিধামতো দুটি দিন’’ চাইছেন। তা হতেই পারে। যে প্রশ্নটি বাকি থাকে, সেটি মাপজোখ উদ্দেশিত প্রশ্ন নয়। বিশ্বভারতীর কর্মকর্তারা বলেছেন যে ১৩ ডেসিমেলের যে জমি আমি বাল্যকাল থেকে ব্যবহার করছি, সেই জমির ওপর আমার কোনো অধিকার নেই। সেটি নাকি বিশ্বভারতীর কর্মকর্তাদের নিজস্ব। প্রশ্নটি তাই এই নয় যে ১৩ ডেসিমেল জমি মাপজোখ করলে কী পাওয়া যাবে। ভালো করে মাপলে ১৩ ডেসিমেল জমি ১৩ ডেসিমেলই থাকবে। কী কারণে লোকে অঙ্ক করে, বিশ্বভারতীর কর্মকর্তাদের তা জানার প্রয়োজন হয়তো আছে। এটি পরিষ্কার হলে বিশ্বভারতীতে কাজকর্মের প্রয়োজন হয়তো একটু হ্রাস পেত। এবং বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের অকারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত হওয়ার ভয়ও হয়তো কিছুটা কমত।’
গত মাসে অমর্ত্য সেনকে চিঠি দিয়ে তাঁর শান্তিনিকেতনের বাসস্থানের জমি ফেরত চায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা কয়েক বছর ধরেই এ বিষয়ে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, যাতে তিনি তাঁর শান্তিনিকেতনের পৈতৃক বাড়িসংলগ্ন জমির একাংশ ছেড়ে দেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীন।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অভিযোগ, অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতনের জমি দখল করে রয়েছেন।
এই অভিযোগের মধ্যেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বাড়তি জমি দখলে নেওয়ারও হুমকি দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এমনকি প্রয়োজনে ‘অবৈধ’ জমি দখল করার জন্য বুলডোজার ব্যবহার করার হুমকিও দেন বিশ্বভারতীর কিছু আধিকারিক। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যাপক অর্মত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে দেখা করে জমিসংক্রান্ত নথিপত্র তাঁর হাতে তুলে দেন।
উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী শুরু করার পর অমর্ত্য সেনের পরিবারের একাধিক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় উপাচার্য ক্ষিতিমোহন সেন, যিনি অমর্ত্য সেনের মাতামহ। তাঁর মা অমিতা সেনও রবীন্দ্রনাথের ছাত্রী ছিলেন এবং বিভিন্ন সময় তাঁকে নানা কাজে সাহায্য করেছেন। অমর্ত্য সেনের নামকরণও করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।