ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটের দিন গতকাল শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে একাধিক স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এতে কেউ নিহত হননি।
এবার পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন হচ্ছে সাত দফায়। শুক্রবার ছিল প্রথম দফা। এই দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে ভোট হয়েছে। আসন তিনটি হলো কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার। ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এ তিন আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থীরা।
এবারের নির্বাচনে এসব আসনে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, বুথ দখল করে ভোট দেওয়া, পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, নেতাদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন ঘটনার কথা জানা গেছে। এর পরও কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাজ্যে তিনটি আসনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।
শিলিগুড়ির একটি ভোটকেন্দ্রে নারীরা ভোট নিয়ে কারচুপির অভিযোগে প্রতিবাদ জানালে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সেখানে বিজেপির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় আসেন। তাঁকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে।
কোচবিহারের একটি ভোটকেন্দ্রে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ গেলে বিক্ষোভ করেন নারী ভোটারেরা। মন্ত্রী পুলিশ পাহারায় কেন্দ্র ছাড়েন। এ ছাড়া ভেটাগুড়িতে বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলে এলাকাবাসী এর পেছনে মন্ত্রী উদয়ন গুহর হাত থাকার অভিযোগ তুলেন। ঘেরাও করা হলে মন্ত্রী পুলিশ প্রহরায় এলাকা ছাড়েন।
তুফানগঞ্জে তৃণমূল কর্মীদের হাতে মার খান বিজেপির সমর্থকেরা। শীতলকুচিতে বিনোদ সরকার নামে বিজেপির এক কর্মীর চোখে আঘাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাথাভাঙ্গায় এক পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
শীতলকুচিতে বিজেপির এক কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। রাজাখরার এক কেন্দ্রে তৃণমূলের বুথ অফিস ভেঙ্গে দিয়েছে বিজেপির সমর্থকেরা। ফলিমারির এক কেন্দ্রের কাছেই পাওয়া গেছে একটি তাজা বোমা।
কোচবিহারের চান্দামারিতে বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের তুফানগঞ্জের হরিহরহাটেও দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে দুপক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র ও দলীয় নির্বাচনী দপ্তর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।
কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক, কংগ্রেসের পিয়া রায় চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নীতিশ চন্ত্র রায়।
জলপাইগুড়িতে লড়ছেন তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায়, বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায় এবং বামফ্রন্টের দেবরাজ বর্মণ।
আলিপুরদুয়ারে লড়ছেন তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক, বিজেপির মনোজ টিগ্গা এবং বামফ্রন্টের মিলি ওঁরাও।
পশ্চিমবঙ্গের এ তিন আসনে ভোট পড়েছে ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে কোচবিহারে ৭৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৭৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং জলপাইগুড়িতে ৭৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
তিন আসনে রাতেই বিজয় মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, আজকের ভোটের পরে তাঁরা ৪ জুন ফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোনো কারণ দেখছেন না।