চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খন্ড বিধানসভার ভোটের সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রাজ্যের ১০ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপি ভালো ফল করলে এক রকম, না করলে যোগীর আসন রক্ষা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। বলতে গেলে এই উপনির্বাচনের ফলের ওপরেই নির্ভর করছে আদিত্যনাথের রাজনৈতিক ভাগ্য।
ওই ১০ আসনের মধ্যে সমাজবাদী পার্টির দখলে ছিল পাঁচটি। বিজেপির কাছে ছিল তিনটি আসন। বাকি দুই আসন বিজেপির দুই শরিকের। উপনির্বাচনে আসনসংখ্যা বাড়াতে পারলে আদিত্যনাথ নিজের আসন ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। না হলে তাঁকে কেন্দ্রীয় স্তরে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে মোদি–শাহর পছন্দের কারও হাতে রাজ্যের ভার তুলে দেওয়া হবে বলে জল্পনা প্রবল।
কিন্তু তার আগে আরেক পরীক্ষায় বসতে চলেছেন আদিত্যনাথ। তাঁর সরকারের ফরমান মেনে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা নিজেদের স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তির খতিয়ান সরকারি পোর্টালে তুলবেন কি না, শুরু হয়েছে সেই জল্পনা।
এক বছর আগে দুর্নীতিরোধে এই ফরমান জারি করা হলেও ২৬ শতাংশের বেশি সরকারি কর্মী তাঁদের সম্পত্তির খতিয়ান এখনো দাখিল করেননি। রাজ্য সরকার এবার জানিয়েছে, ৩১ আগস্টের মধ্যে সম্পত্তির বিবরণ না দিলে কর্মীদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে। পদোন্নতিও হবে না।
সরকারি এই ফরমান রাজ্যের সরকারি কর্মীদের অসন্তুষ্ট করেছে। বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত বলবৎ করা হলে উপনির্বাচনে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে রাজ্য বিজেপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুসারীদের ধারণা, এই নিদান সাধারণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিও এতে বেড়ে যাবে। মানুষ বুঝবে, আদিত্যনাথ সরকারি কর্মী স্তরে দুর্নীতি দূর করতে উদ্যোগী। এতে সরকার ও প্রশাসনের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থাশীল হবে। ভরসা বাড়বে মুখ্যমন্ত্রীর ওপরও।
এই সরকারি সিদ্ধান্তটি অবশ্য এক বছরের পুরোনো। গত বছরের আগস্টে আদিত্যনাথ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের সম্পত্তি দাখিলের এই নির্দেশ জারি করেছিলেন। সে জন্য ‘মানব সম্পদ’ নামে এক সরকারি পোর্টালও খোলা হয়েছে। প্রথম নির্দেশে সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ৩১ ডিসেম্বর।
আশানুরূপ সাড়া না মেলায় মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন করা হয়। তারপর ৩১ জুলাই। কিন্তু দেখা যায়, ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪২৯ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে সম্পত্তির খতিয়ান দাখিল করেছেন মাত্র ২৬ শতাংশ। এর অর্থ, এখনো ১৩ লাখের বেশি কর্মী সম্পত্তির হিসাব দাখিল করেননি।
ফলে নতুন সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে ৩১ আগস্ট। এই হিসেবে সময় আছে আর মাত্র এক সপ্তাহ। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ কুমার সিং গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, এটাই শেষবার। ৩১ আগস্টের মধ্যে যাঁরা নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে। পদোন্নতিও দেওয়া হবে না।
মনোজ কুমার বলেছেন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার স্বার্থেই এই নির্দেশনা। রাজ্যের মন্ত্রী দানিশ আজাদ আনসারি গণমাধ্যমকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্নীতিকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। এই সরকারি নিদান সেই লক্ষ্যেই।
বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করছে। সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা লোক দেখানো। সস্তার ‘গিমিক’। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এতই দৃঢ় হলে মুখ্যমন্ত্রী ২০১৭ সালে ক্ষমতাসীন হয়েই এই কাজ করতে পারতেন। এখন করছেন গদি টলমল করছে বলে এসব করছেন। তা ছাড়া এই নির্দেশ বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিজেপির আমলে সরকারি স্তরে দুর্নীতি কত ব্যাপক।