৪ জুন স্থানীয় শিখ জনসাধারণের একাংশ এক প্যারেড মিছিল বের করে। সেই প্যারেডে ইন্দিরা হত্যা–সম্পর্কিত এক ট্যাবলো বের করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাদৃশ্য সাজিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল (ট্যাবলো) বের করায় কানাডার কাছে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘ভারত ও কানাডার সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দৃশ্য মোটেই সুখকর নয়। ভোট ব্যাংক রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো কারণে কেউ এই কাজ করতে পারে বলে আমি মনে করি না।’
ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে উগ্রপন্থীদের কবজা থেকে পবিত্র স্বর্ণমন্দির মুক্ত করতে ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেনা অভিযান শুরু করেছিলেন। ৬ জুন ছিল সেই ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ অভিযানের ৩৯তম বার্ষিকী। সে উপলক্ষে কানাডার ব্রাম্পটন শহরে ৪ জুন স্থানীয় শিখ জনসাধারণের একাংশ এক প্যারেড মিছিল বের করেন। প্রধানত খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থকেরা সেই প্যারেডে ইন্দিরা হত্যা–সম্পর্কিত এক ট্যাবলো বের করেন। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা সেই প্যারেডে ইন্দিরা হত্যাদৃশ্যসংবলিত ট্যাবলোটির এক ভিডিও ভাইরাল হয়। কংগ্রেস ওই আচরণের কড়া সমালোচনা করার পর গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
জয়শঙ্কর খালিস্তানিদের ওই আচরণ ও তা করার অনুমতিদানের জন্য কানাডা সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি মনে করি এই বিষয়ের সঙ্গে আরও বড় সমস্যা জড়িয়ে আছে। সত্যি বলতে কি, ভোট ব্যাংক রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো কারণে কেউ এমন করতে পারে বলে আমি মনে করি না। বড় কথা হলো, যারা হিংসায় বিশ্বাস করে, যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্রপন্থী, তাদের জমি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা ভালো নয়। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাড়বাড়ন্ত বৃহত্তর অন্তর্নিহিত সমস্যা। সেটা কানাডার পক্ষেও ভালো নয়।’
ওই মিছিলের কিছুটা ভিডিও রেকর্ডিং মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা তাঁর করা টুইটের সঙ্গে জুড়ে দেন। সেই ক্লিপিংয়ে দেখা যাচ্ছে, এক নারী দুই হাত মাথায় তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর শাড়ি পরা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ওই নারীর সামনে ভারতীয় সেনার পোশাকে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে দুই শিখ। তাঁদের বন্দুক ওই নারীর দিকে তাক করা। সেখানে বড় করে লেখা ‘প্রতিশোধ’।
এই ক্লিপিং জুড়ে মিলিন্দ দেওরা টুইটে লিখেছেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার চলেছে এই ট্যাবলোর মিছিল। এটা দেশের এক যন্ত্রণার ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রীর হত্যার দরুন যে যন্ত্রণা গোটা দেশ অনুভব করেছিল, একজন ভারতীয় হিসেবে মনে করি গোটা পৃথিবীর উচিত এক সুরে এই মিছিলের নিন্দা করা।’
দেওরার সেই টুইট সমর্থন করে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বৃহস্পতিবার টুইটে লেখেন, ‘যথার্থই। এটা এক জঘন্য ঘটনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের উচিত কানাডাকে ভারতের কঠোর মনোভাবের কথা জানানো।’
কানাডায় খালিস্তানপন্থীরা অনেক বছর ধরেই সক্রিয়। শুধু কানাডাই নয়, খালিস্তানপন্থীরা নানাভাবে সক্রিয় অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনেও। সম্প্রতি এই তিন দেশেই খালিস্তানের সমর্থনে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় দূতাবাসে আক্রমণও চালানো হয়েছে। জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়ে খালিস্তানি পতাকা ওড়ানোও হয়েছে। কানাডায় ভোটের সময় এই শিখ সম্প্রদায়ের সমর্থন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই কারণে ভারতের দাবি সত্ত্বেও খালিস্তানিদের বিরুদ্ধে সে দেশের সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।