ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে টানা তল্লাশি, হোম অফিসে বেশির ভাগ কর্মী

ভারতের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশিতে গেলে ভবনের সামনে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। কে জি মার্গ, নয়াদিল্লি, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ছবি: টুইটার

রাত পেরিয়ে দিন হয়েছে, কিন্তু শেষ হয়নি দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি। ভারতের আয়কর কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার থেকে টানা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রচারমাধ্যমটি বেশির ভাগ কর্মীকে হোম অফিস করার জন্য ই–মেইল পাঠিয়েছে। খবর এনডিটিভির
কর্মীদের উদ্দেশে লেখা ই–মেইলে বিবিসি জানিয়েছে, দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে তল্লাশি এখনো শেষ হয়নি। সম্প্রচার বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কর্মীদের আয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, তাঁরা চাইলে ব্যক্তিগত আয় সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। তবে বেতন–সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত।

এ ছাড়া সম্প্রচারমাধ্যমটি তাদের কর্মীদের ভারতের আয়কর কর্মকর্তাদের কাজে সহযোগিতা করা ও ‘বিস্তৃতভাবে প্রশ্নের উত্তর’ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ভারতীয় আয়কর দপ্তরের দল দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির দপ্তরে পৌঁছায়। এরপরই সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের মুঠোফোন ও ল্যাপটপ জমা রাখেন আয়কর কর্মকর্তারা। এ সময় বিবিসির কয়েকজন কর্মীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তাঁরা।

বিবিসির কর্মীদের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, তল্লাশির সময় আয়কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবিসির কয়েকজন কর্মীর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে আয়করের কর্মকর্তারা বিবিসির কর্মীদের নিজস্ব ডেস্কটপ চালু করিয়ে ‘কর’ লিখে অনুসন্ধান চালান।

এই কার্যক্রমকে তল্লাশি বলতে নারাজ আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, তল্লাশি নয়, ‘আয়কর জরিপের’ অংশ হিসেবে তাঁরা বিবিসির কার্যালয় পরিদর্শনে গেছেন।

তল্লাশি নিয়ে গতকাল বিকেলে বিবিসি নিউজ প্রেস টিম এক টুইটে বলেছে, ‘বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই অফিসে আয়কর কর্তৃপক্ষ এখনো রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছি। যত শিগগির সম্ভব বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পারব বলে আমরা আশা করছি।’

বিবিসির দুই কার্যালয়ে আয়কর কর্মকর্তাদের অভিযানের খবর প্রকাশিত হলে দেশে–বিদেশে সমালোচনা শুরু হয়। কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল বলেন, ‘সরকার কতটা হতাশায় ভুগছে, তা এ থেকে বোঝা যাচ্ছে। আরও বোঝা যাচ্ছে, মোদি সরকার কতটা আতঙ্কগ্রস্ত।’

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব টুইট করে বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন যখন ভয়হীনতার বদলে ভয় ও দমনপীড়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, তখন বুঝতে হবে শেষের দিন ঘনিয়ে এসেছে।’ জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইটে লিখেছেন, ‘কেন এই তল্লাশি, তার কারণ পরিষ্কার।’
ভারতের এডিটর্স গিল্ডের পক্ষে সভাপতি সীমা মুস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক অনন্ত নাথ ও কোষাধ্যক্ষ শ্রীরাম পাওয়ার এক বিবৃতিতে এই তল্লাশির নিন্দা করেছেন। তবে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়ার মতে, ‘পৃথিবীর সবচে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বিবিসি। এ দেশে ব্যবসা করতে গেলে দেশের আইন মানতে হবে। তারা আইন মেনে থাকলে ভয়ের কিছু নেই।’

দিল্লি–মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশির বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। এখনই এই বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ নেড প্রাইস আরও বলেন, ‘আমরা বরাবরই বিশ্বজুড়ে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে সমর্থন করি। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার গুরুত্বকে মানবাধিকার হিসেবে তুলে ধরছি, যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখে। এটা ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে।’
গত জানুয়ারিতে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে বিবিসি। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামে তথ্যচিত্রটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ভারতে তা সম্প্রচারিত না হলেও বিজেপি সরকার তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই তথ্যচিত্রের মূল বক্তব্য, গুজরাট দাঙ্গার সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পৃক্ততা ছিল। ওই দাঙ্গাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ওই দাঙ্গা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতেও সাহায্য করেছে।