সদ্য গঠিত সরকারবিরোধী জোটের পাশে থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, ‘আমরা চেয়ার চাই না, শুধু মোদির বিদায় চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মোদির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে চাই। বুঝে নিতে চাই এ রাজ্যের বকেয়া পাওনা। আজ শুক্রবার কলকাতার ধর্মতলায় বার্ষিক শহীদ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
এই ঘোষণার মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান স্পষ্ট করে দিলেন, বিজেপির সঙ্গে কোনো সমঝোতার রাস্তায় তিনি আর হাঁটবেন না। গত মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দল নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘ইন্ডিয়া’ নামে বিজেপিবিরোধী জোট গঠন করা হয়। ওই দিন জোটের বৈঠকে মমতাও অংশ নিয়েছিলেন।
এরপরও আগামী দিনে বিজেপিবিরোধিতায় মমতার কী ভূমিকা হবে, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। কারণ, বিজেপিবিরোধী জোটে পশ্চিমবঙ্গে মমতার দুই প্রধান বিরোধী সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস রয়েছে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মমতা আজ জানান, তিনি ইন্ডিয়া জোটের একজন ‘সৈনিক’ হিসেবে কাজ করবেন।
ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে মমতা বলেন, ‘ইন্ডিয়া লড়বে সৈনিকের মতো, পতাকা হাতে পাশে থাকব। ভারত জিতবে, হারবে মোদি, হারবে বিজেপি। এরপর তিনি ‘জয় বাংলা, জয় ইন্ডিয়া’ স্লোগান দেন।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই পুলিশের গুলিতে যুব-কংগ্রেসের ১৩ কর্মী নিহত হন। অবশ্য সে সময় তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হয়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল গঠিত হয়েছে ১৯৯৮ সালে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৩ সালের সেই মিছিলে ছিলেন। তাই দিনটিকে তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস হিসেবে তিনি পালন করেন।
আজ শুক্রবার বার্ষিক শহীদ সমাবেশে মণিপুর দিয়েই ভাষণ শুরু করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমি বলব, সব বিজেপিবিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হোক এবং সেই দল মণিপুরে যাক। ত্রাণশিবিরে আমরা যাব। মানুষের সঙ্গে কথা বলব। সবাই একমত হলে আমি রাজি আছি।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মণিপুরের মানুষকে আমরা জানাতে চাই, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের মানুষ আপনাদের পাশে আছে। সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নও তুলতে চাই, বিজেপির প্রধান স্লোগান ছিল “বেটি বাঁচাও” অর্থাৎ মেয়েদের বাঁচাও। আজ তো দেশের মেয়েরা জ্বলছে। গুজরাটে বিলকিস বানুকে যারা ধর্ষণ করেছিল, তারা জামিন পেয়ে গেছে। মণিপুরে অত্যাচারীদের দুই মাস পরেও সাজা হয়নি। আমাদের মায়েরা জ্বলছে, দেশ জ্বলছে।’
প্রায় ৪৫ মিনিটের ভাষণে মমতা এরপর পুরো সময় দেন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণায়। সব কর্মসূচিই আগামী বছরের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ঘোষিত হয়। এ কর্মসূচির কেন্দ্রে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া অর্থ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ।
মমতা বলেন, টাকা না দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী ৫ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্লকে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করবেন তৃণমূলের কর্মীরা।