ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতাসহ ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গতকাল শনিবার থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য আর জি করসহ পাশের বেলগাছিয়া ও শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় এলাকায় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বলা হয়েছে, ওই এলাকায় পাঁচজন বা তার বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না।
সিবিআই এ ঘটনার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন হাসপাতালের সদ্য পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে তাঁকে সিবিআই দপ্তরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ওই দিন গভীর রাতে অধ্যক্ষকে ছেড়ে দিয়ে গতকাল সকালে আবার তাঁকে ডাকা হয় সল্টলেকের সিবিআইয়ের দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১৩ ঘণ্টা জেরা করে রাতে ছেড়ে দিলেও আজ রোববার ভোরে আবার তাঁকে সিবিআই দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিজেপি নেতা ও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ওই নারী চিকিৎসকের ভিসেরা বদল করা হয়েছে প্রমাণ লোপাটের জন্য। যদিও লালবাজার পুলিশ হেডকোয়ার্টার বলছে, ভিসেরা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকিং, সিল বা লেবেল লাগানোর কাজ পুলিশ করে না। সুতরাং এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র শান্তনু সেনকে আর জি করের ঘটনার পরে রাজ্যের তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরানোর পর গতকাল তাঁকে কলকাতার পৌরসভার উপদেষ্টার পদ থেকেও সরানো হয়েছে।
আরেক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আর জি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের মেরামত শুরু হলো কেন? ভাঙা হলো কেন সেমিনার হল? এতে করে তো ভুল বার্তা যাবে মানুষের কাছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ওদের চক্রান্ত ভাঙতে হবে।’
গতকাল রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এক নির্দেশে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৪২ জন অধ্যাপক ও বিশিষ্ট চিকিৎসককে হঠাৎ বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি তোলেন। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দপ্তর বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।
গতকাল নাগরিক সমাজের উদ্যোগে কলকাতার কলেজ স্কয়ার থেকে আর জি কর হাসপাতাল পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ সময় শত শত চিকিৎসকসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন।
৯ আগস্ট ভোরে আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় এ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দায়িত্ব পালন শেষে সেমিনার রুমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। এর পর থেকেই চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি চলছে।