ভারতে নতুন লোকসভা গঠনের পর প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ভাষণে মণিপুরের কথা উল্লেখ ছিল না। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। এ নিয়ে তাঁদের চেয়ে জোরালো ভাষায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ক্ষমতাসীন বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মণিপুরের কংগ্রেস-দলীয় সংসদ সদস্য আঙ্গমচা বিমল আকইজাম।
জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিমল আকইজাম এবার কংগ্রেসের মনোনয়নে মণিপুর রাজ্য থেকে লোকসভায় জিতেছেন। গতকাল সোমবার রাত ১২টার কিছুক্ষণ আগে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদসূচক বক্তব্য দিতে গিয়ে আকইজাম মণিপুর বিষয়ে সরকারের দীর্ঘদিনের নীরবতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন।
বিমল আকইজাম বলেন, এই মুহূর্তে দেশের যে অংশে সবচেয়ে বেশি মানুষ গৃহহীন এবং নিয়মিত মারা যাচ্ছেন, সেই অঞ্চলের বিষয়টি গভীর রাতে উত্থাপিত হওয়াকে অবহেলা বলেই মনে করেন আকইজাম। তিনি বলেন, মণিপুর নিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল এক বছরের বেশি সময় তাদের নীরবতা পালন করে আসছে।
অধ্যাপক আকইজামের প্রশ্ন, ‘এই নীরবতা উত্তর-পূর্ব এবং মণিপুরের মানুষকে কি বার্তা দিচ্ছে? সেখানে কী হলো, না হলো, তা নিয়ে ভারতের কি কিছু যায় আসে না? ভারতের ঘটনাপ্রবাহে তাদের কোনো স্থান নেই?’
সংঘর্ষের তীব্রতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আকইজাম বলেন, মণিপুর দেশের এমন একটি রাজ্য, যেখানে অস্ত্রহীন পুলিশের চেয়ে সশস্ত্র রক্ষীর সংখ্যা বেশি। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা সেখানে বেশি। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল থামছে না।
আকইজাম বলেন, মণিপুর রাজ্য দেশের সবচেয়ে ‘মিলিটারাইজড’ এলাকাগুলোর একটি, যেখানে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী ছাড়াও সশস্ত্র পুলিশের সংখ্যা বেসামরিক পুলিশের চেয়ে বেশি। এরপরও ৬০ হাজারের বেশি মানুষ কীভাবে গৃহহীন এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি কীভাবে ধ্বংস হচ্ছে?’
কংগ্রেসের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এরপরও আমাদের প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকতে পারেন। আপনার যদি মণিপুরের জন্য উদ্বেগ থাকত, তবে এই সদনে বা রাষ্ট্রপতির ভাষণে মণিপুর নিয়ে এমন নীরবতা থাকত না।’
মণিপুরের এই সংসদ সদস্য বলেন, মণিপুরের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা ঔপনিবেশিক মানসিকতার কথা মনে করিয়ে দেয়। ৬০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন, মারা গেছেন দুই শতাধিক মানুষ। এটি কোনো তামাশা না। তবু আমাদের প্রধানমন্ত্রী নীরব এবং রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে মণিপুরের কথা উল্লেখ করলেন না। এটা কী প্রমাণ করে?’
এই প্রশ্নের উত্তরও নিজেই দিয়েছেন এই অধ্যাপক-রাজনীতিবিদ। বলেছেন, ‘আপনি কি এই সত্য অস্বীকার করতে পারেন যে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও উত্তর-পূর্বের ইতিহাসের (পাঠ্যসূচিতে) অন্তর্ভুক্তির দাবি করে যাচ্ছি? এটি একটি ক্ল্যাসিক বর্জন।’
পরিশেষে আকইজাম তাঁর ভাষণে বলেন, তিনি এবং মণিপুরের মানুষ তখনই তাঁদের মুখ বন্ধ করবেন, যখন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের যন্ত্রণা নিয়ে মুখ খুলবেন।
অধ্যাপক বিমল আকইজাম বলেন, ‘আপনি যদি আমার কণ্ঠে উদ্বেগ, যন্ত্রণা এবং বেদনা শুনতে পান, অনুগ্রহ করে গিয়ে দেখুন সেই ৬০ হাজার মানুষকে, যাঁরা ত্রাণশিবিরে পড়ে আছেন। আপনি সেখানে না যাওয়া পর্যন্ত দেশভাগের স্মৃতির কথা বলবেন না।’
কংগ্রেস-দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে মুহূর্তে মুখ খুলবেন, আমিও সেই মুহূর্তে চুপ হয়ে যাব। জাতীয়তাবাদী দল বলে যে দল নিজেদের পরিচয় দেয়, সেই দল বলবে, মণিপুর ভারতের অংশ এবং আমরা সেই রাজ্যের মানুষের প্রতি যত্নশীল। তবেই আমি তাদের জাতীয়তাবাদকে মেনে নেব।’