মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো ‘অভয়া পরিক্রমা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী নয়জন জুনিয়র চিকিৎসকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন কলকাতার হাইকোর্ট। গতকাল শুক্রবার বিচারপতি শম্পা সরকার তাঁদের মুক্তি দেন। এক হাজার রুপি বন্ডের মাধ্যমে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।
শুনানি শেষে বিচারপতি শম্পা সরকার ওই নয় আন্দোলনকারীকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়ে ১৫ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে শহরজুড়ে ‘অভয়া পরিক্রমা’ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে কলকাতার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে ১০ দফা দাবিতে লিফলেট বিতরণ করছিলেন তাঁরা।
এরই পথ ধরে বুধবার দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা পূজামণ্ডপের সামনে লিফলেট বিতরণ ও স্লোগান দিচ্ছিলেন একদল আন্দোলনকারী। এ সময় নয় আন্দোলনকারীকে আটক করে কলকাতার লালবাজারের পুলিশ হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকেরা ছুটে যান লালবাজারে। তাঁরা সতীর্থদের মুক্তির দাবিতে রাতভর অবস্থান ধর্মঘট করেন। কিন্তু ছেড়ে না দিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আলীপুর আদালতে। আলীপুর আদালত জামিন না দিয়ে তাঁদের সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এর প্রতিবাদে গতকাল কলকাতা হাইকোর্টে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মামলার শুনানি হয় বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে।
মামলার এজাহারে পুলিশ এই ঘটনায় তিনজন পুলিশ আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বিচারপতি এজাহার পর্যালোচনা করে বলেন, ওই তিন পুলিশের মেডিকেল সার্টিফিকেট একই রকমের। তিনজনকেই ব্যথা উপশম ও হজমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিচারপতি হোয়াটস অ্যাপ ও বিভিন্ন লিফলেট, প্লাকার্ড-ব্যানারও পর্যালোচনা করেন। এরপর পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, সেখানে উসকানি দেওয়ার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় জুনিয়র চিকিৎসকদের ডাকে বিশাল এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ধর্মতলার অনশন মঞ্চের কাছে। তাঁরা ঘোষণা দেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে।
আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে গত শনিবার থেকে কলকাতার ধর্মতলায় সাত নবীন চিকিৎসক আমরণ অনশন শুরু করেন। বৃহস্পতিবার রাতে অনশনকারী চিকিৎসকদের একজন অনিকেত মাহাতো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর চিকিৎসায় চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাঁর পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। অনশনের প্রভাব পড়েছে লিভার ও কিডনিতে। অনশনকালে ক্রমেই তাঁর অবস্থার অবনতি হয়।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, গতকাল রাতে অনশন মঞ্চে যোগ দিয়েছেন আরও দুই জুনিয়ার চিকিৎসক। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের দুই জুনিয়র চিকিৎসকও আমরণ অনশন করছেন।
গতকাল ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি আরভি অশোকন কলকাতায় এসে অনশন মঞ্চে অসুস্থ চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর সঙ্গে দেখা করেছেন। অন্য অনশনকারীদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সঙ্গে তারাও আছেন। তাঁরা চান রাজ্য সরকার অবিলম্বে আন্দোলনকারীদের ১০ দফা দাবি মেনে নিক।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।