ভারতের মুম্বাইয়ের একটি বাড়ি থেকে সৃষ্টি তুলি নামে এয়ার ইন্ডিয়ার এক পাইলটের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণী তাঁর প্রেমিকের প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেছেন। সৃষ্টিকে তাঁর প্রেমিক প্রকাশ্যে অপমান করতেন, মানসিকভাবে হয়রানি করতেন এবং তাঁর থেকে জোর করে অর্থ আদায় করতেন। সৃষ্টিকে আমিষজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতেও চাপ দিতেন প্রেমিক। এরই মধ্যে তাঁর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত সোমবার মুম্বাইয়ের মারোল এলাকায় সৃষ্টির ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ফোনে প্রেমিক আদিত্য পণ্ডিতের (২৭) সঙ্গে সৃষ্টির কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর তিনি ডেটা কেব্ল ব্যবহার করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আদিত্য পুলিশকে জানিয়েছেন, সৃষ্টির ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ পেয়ে তিনি ছুটে যান এবং একজন তালা-চাবির মিস্ত্রিকে ডেকে আনেন। এরপর দরজা খুলে সৃষ্টিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ফ্ল্যাটে কোনো সুইসাইড নোট পায়নি পুলিশ।
সৃষ্টি উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা সৃষ্টির এই মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর মামা বিবেক তুলি বলেছেন, ‘তারা (পুলিশ) বলছে, সৃষ্টি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। এটা পরিকল্পিত হত্যা। সে শক্তিশালী ছিল, না হলে সে পাইলট হতে পারত না। আমরা তার বন্ধুর (আদিত্য) সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সে সৃষ্টির সঙ্গে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিল; কিন্তু কোর্স শেষ করতে পারেনি। সে সৃষ্টির প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল এবং তাকে হয়রানি করত।’
থানায় দায়ের করা এফআইআরের তথ্যমতে, দিল্লিতে বাণিজ্যিক বিমান চালানোর প্রশিক্ষণের সময় আদিত্যের সঙ্গে সৃষ্টির পরিচয় হয়। সৃষ্টি কোর্স শেষ করলেও আদিত্য বাদ পড়েন। সৃষ্টি বিমান চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার পর গত বছর মুম্বাইয়ে চলে আসেন।
সৃষ্টির মামা বলেন, তাঁরা সৃষ্টির ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত মাত্র এক মাসের স্টেটমেন্ট চেক করতে পেরেছি। দীপাবলির সময় প্রায় ৬৫ হাজার রুপি আদিত্যের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমি নিশ্চিত, আদিত্য সৃষ্টিকে ব্ল্যাকমেল করছিল। আমি ব্যাংকের কাছে পুরো বছরের স্টেটমেন্ট চেয়েছি। হয়তো সৃষ্টি আদিত্যকে টাকা দিতে অস্বীকার করেছিল। আর এটাই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
আদিত্য দিল্লির কাছে ফরিদাবাদে থাকেন। তিনি প্রায়ই সৃষ্টির সঙ্গে থাকার জন্য মুম্বাইয়ে যেতেন। বিবেক তুলি বলেন, ‘পুলিশ বলছে, সৃষ্টি আত্মহত্যা করেছে। আমি জানি না, কীভাবে তিনি কারসাজি করে সৃষ্টিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আদিত্য কী করেছে? মৃত্যুর মাত্র ১৫ মিনিট আগেও সৃষ্টি তার মা এবং খালার সঙ্গে খুশি মনে কথা বলেছিল।’
বিবেক বলেন, ‘সৃষ্টি তাঁর পরিবারকে কোনো হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানায়নি। সে তার বোনকে কিছু কিছু বিষয় বলেছে। কিন্তু যখন আমি তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করি, তারা আমাকে বলেছিল, আদিত্য তাকে কতটা হেনস্তা করত।’ তিনি বলেন, তাঁর পরিবার বিচারের দাবি নিয়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে যাবে।
সৃষ্টির মামা অভিযোগ করেন, সৃষ্টির মৃত্যুর সঙ্গে একজন নারী পাইলটও জড়িত। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ওই নারী তালা-চাবির মিস্ত্রিকে ডেকে এনেছিল। তাকে দরজা খুলতে দিয়েছিল এবং সৃষ্টিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশকে না ডেকে কারও ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঢুকে পড়ে? আর তারা প্রশিক্ষিত পাইলট।’
সৃষ্টির পরিবারের অভিযোগ, আদিত্য সৃষ্টিকে আমিষজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতেও চাপ দিতেন। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত কারণে সৃষ্টি তাঁর বোনের বাগদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারায় তাঁদের মধ্যে মারামারিও হয়।
এ ঘটনায় সৃষ্টির পরিবার একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে এবং আদিত্যকে গ্রেপ্তার করেছে।