কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চান দলটির অনেক নেতা। তা ছাড়া কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক উদ্ধব ঠাকরের দল শিবসেনাও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রাহুলকেই চাইছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মানিকম ঠাকুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে রাহুলকে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন।
তামিল নাড়ুর বিরুধুনগর থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের এই সংসদ সদস্য লিখেছেন, ‘আমি আমার নেতা রাহুল গান্ধীর নামে ভোট চাইছি। আমি মনে করি, লোকসভায় তাঁরই কংগ্রেসের নেতা হওয়া উচিত। আমার আশা, কংগ্রেসের নির্বাচিত লোকসভার সদস্যরাও এমনটি চাইবেন। তবে কংগ্রেসের সংসদীয় দল কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা দেখার বিষয়। দিন শেষে আমরা একটি গণতান্ত্রিক দল।’
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য বিবেক টাংখাও একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘রাহুল প্রচারণায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন আমাদের নির্বাচনী প্রচারের মুখ। লোকসভার সংসদীয় পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য তিনিই দায়বদ্ধ। তবে হ্যাঁ, রাহুল গান্ধী নিজের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত একা নিতে পারেন না। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের। আমার আশা, একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হবে।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা কার্তি চিদাম্বরম বলেন, ‘আমি মনে করি (বিরোধীদলীয় নেতার) পদটি কংগ্রেসেই পাবে। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মত, কংগ্রেসের তরফে রাহুল গান্ধী নিজে অবশ্যই বিরোধীদলীয় নেতার পদটি গ্রহণ করবেন।’
শুধু কংগ্রেসের নেতারাই নন, বরং ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক শিবসেনার সংসদ সদস্য সঞ্জয় রাউতও রাহুলকে লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চান। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রাহুল গান্ধী নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকলে আমরা আপত্তি করব কেন? তিনি নিজেকে একজন জাতীয় নেতা হিসেবে একাধিকবার প্রমাণ করেছেন। তিনি অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। আমরা সবাই তাঁকে চাই। আমরা তাঁকে ভালোবাসি। তাঁকে (পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা করা নিয়ে) জোটে কোনো আপত্তি ও মতানৈক্য নেই।’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। তখন ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে দলটির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাহুল গান্ধী। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর বড় কৃতিত্ব তাঁর বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
৫৩ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী ২০০৪ সালে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি কখনো কোনো সাংবিধানিক পদ গ্রহণ করেননি। এমনকি তাঁর দল ক্ষমতায় থাকার সময়ও নয়।
গত বছর রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদবি নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ করে বিজেপি। এরপর এক মানহানির মামলায় তাঁর লোকসভার সদস্যপদ বাতিল করা হয়। তবে পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি তাঁর সদস্যপদ ফিরে পান।
ভারতের ৫৪৩ আসনের এবারের লোকসভার নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ আসন। এর মধ্যে বিজেপির আসন ২৪০। সরকার গঠনের জন্য দরকার ২৭২ আসন।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৩ আসন। বিজেপিকে সরকার গঠন করতে হলে প্রধান দুই জোট শরিক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি-ইউ) ও চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমর্থন প্রয়োজন।