শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন হত্যাচেষ্টার প্রশ্নে ভারতের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা চাইছে, ওই ব্যর্থ হত্যাচক্রান্ত নিয়ে যে তদন্ত কমিটি ভারত গঠন করেছে, সেই তদন্তের বিষয়বস্তু দ্রুত প্রকাশ করুক। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভারতের উচিত, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। কারণ, তাদের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে সে দেশে হত্যা করার এক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এতে ভারত যুক্ত ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ। ওই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে চেক রিপাবলিকে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারী দলের অভিযোগ, ওই হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র ভারতেরই করা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গত সোমবার এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, ভারতের উচিত, এই অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা ও তদন্ত করা।’
গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ওই অভিযোগ করার পর ভারত তা সরাসরি অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করেনি। বরং জানিয়েছিল, সংগঠিত অপরাধ চক্র, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। ভারত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি সবকিছু (হত্যাচেষ্টার অভিযোগ) তদন্ত করে দেখবে। ঘটনা হলো, সেই কমিটি এ পর্যন্ত কী করেছে, কী জানা গেছে—সে বিষয়ে ভারত এখনো কিছুই জানায়নি।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক সংবাদপত্র সম্প্রতি জানিয়েছে, ওই হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র করেছিল ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)। ওই প্রতিবেদনে তৎকালীন ‘র’ প্রধান সামন্ত গোয়েলের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। ভারত যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রতিবেদনকে ‘অপ্রমাণিত ও অবাঞ্ছিত’ বলে মন্তব্য করেছে।
ম্যাথু মিলার সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে ভারত সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের কাজ চলছে। আমরা তার ফল দেখার অপেক্ষায় আছি। তবে আমরা এটা স্পষ্ট করে জানিয়েছি, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই ভারতও একই রকম গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখুক।’
পান্নুন হত্যাচেষ্টায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ আসার আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও এমনই এক অভিযোগ এনেছিলেন। সে দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, তাঁদের নাগরিক শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে ভারত খুন করিয়েছে। ভারত সেই অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গেই খারিজ করে দিয়েছিল।
সম্প্রতি কানাডা ওই হত্যায় জড়িত সন্দেহে সে দেশে বসবাসরত তিন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের পরিচয় ও ছবিও তারা প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ক্রমে তারা ভারতের সংস্রবের নমুনা পাচ্ছে।
কানাডার অভিযোগ, তদন্তের কাজে ভারত সহযোগিতা করছে না। ভারতের অভিযোগ, তারা চাইলেও কানাডা তাদের কোনো তথ্যপ্রমাণ দিচ্ছে না।
কানাডায় তিন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গেও মিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বলেছেন, ওই বিষয়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতির কথা কানাডাই বলতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে পারবে দেশের বিচার বিভাগ।
মিলার বলেন, ‘আমি শুধু এটাই বলব, প্রথম যখন এই অভিযোগ উঠেছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম, ভারতের উচিত, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা এবং তদন্ত করা।
কানাডায় নিহত নিজ্জর ও হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া পান্নুন—দুজনেই ভারতের চোখে শিখ সন্ত্রাসবাদী। দুজনেই বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তান আন্দোলনের নেতা। পান্নুনের সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ ভারতে নিষিদ্ধ।
ভারতের অভিযোগ, বারবার বলা সত্ত্বেও কানাডা সরকার সে দেশে বসবারত শিখ সন্ত্রাসবাদীদের কাজকর্মে রাশ টানছে না। তাদের ভারতবিরোধী প্রচারে বাধা দিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁকে শিখ জনগোষ্ঠীর সমর্থন নিতে হচ্ছে।
ভারতের পর কানাডাতেই শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করে। ভারতের অভিযোগ, সরকারের প্রশ্রয় পেয়ে সে দেশের শিখ সমাজের একাংশ সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের পাশাপাশি সংগঠিত অপরাধ কর্মকাণ্ডও চালাচ্ছে। এতে কানাডারই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। অথচ বারবার বলা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কারণে সরকার কিছু করছে না। এ কারণে ভারত–কানাডা সম্পর্ক ক্রমে খারাপ হচ্ছে।