কলকাতায় আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা দ্রোহের কার্নিভ্যালে অংশ নেন
কলকাতায় আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা দ্রোহের কার্নিভ্যালে অংশ নেন

কলকাতায় চিকিৎসকদের ‘দ্রোহের কার্নিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত, রাজ্য সরকার করল ‘দুর্গা কার্নিভ্যাল’

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা ছিল আগেই। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার প্রতিবছরের মতো কলকাতায় ‘দুর্গা কার্নিভ্যাল’ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল। অন্যদিকে আর জি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস ঘোষণা দেয়, তারা ‘দ্রোহের কার্নিভ্যাল’ আয়োজন করবে। বিরোধ ও বাধার মুখে বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। অবশেষে হাইকোর্টের আদেশে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে চিকিৎসকদের প্রতিবাদী এ আয়োজন।

চিকিৎসকদের পূর্বঘোষিত ‘দ্রোহের কার্নিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল বিকেল চারটায় রানী রাসমণি অ্যাভিনিউতে। এ আয়োজন বন্ধ করতে ওই এলাকায় জারি করা হয় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা, যা আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা হিসেবে পরিচিত ছিল।

কলকাতায় রাজ্য সরকারের আয়োজনে দুর্গা কার্নিভ্যালের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও অন্যরা

রানী রাসমণি অ্যাভিনিউতে লোহার ব্যারিকেড বসিয়ে সড়ক আটকে দেয় পুলিশ। যাতে ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে না পারেন। এতে কলকাতার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হন। চিকিৎসকেরা শরণাপন্ন হন কলকাতা হাইকোর্টের।

মঙ্গলবার বিচারপতি রবিকিশান কাপুরের এজলাসে জরুরি ভিত্তিতে এ আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে কলকাতা পুলিশের ১৬৩ ধারা জারির বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দেন আদালত। অনুমতি দেওয়া হয় চিকিৎসকদের প্রতিবাদী ‘দ্রোহের কার্নিভ্যাল’ আয়োজনের।

হাইকোর্টের আদেশের পর রানী রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় পুলিশ। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় ‘দ্রোহের কার্নিভ্যাল’। রানী রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে ধর্মতলা—লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি যোগ দেন সাধারণ মানুষ। স্লোগান ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আয়োজনে রেড রোড থেকে শুরু হয় ‘দুর্গা কার্নিভ্যাল’। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার এই উৎসবকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা দেয় ইউনেসকো। এরপর থেকে উৎসব নতুন মাত্রা পায়। এবার কলকাতাসহ রাজ্যের ১০৮টি সেরা প্রতিমা কার্নিভ্যালে যোগ দিয়েছে। যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এদিকে আর জি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে আজ ধর্মতলায় মানববন্ধন করেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ধর্মতলার অনশন মঞ্চে আরও  দুজন জুনিয়র চিকিৎসক আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন। এখন এ সংখ্যা ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে ছয়জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিসাধীন।

সুপ্রিম কোর্টে শুনানি

আর জি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় করা মামলায় মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ষষ্ঠ দফার শুনানি হয়েছে। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে বলেন, টাস্কফোর্সের গত ৯ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের পর আর কেন বৈঠক হলো না? কেন পূর্বের নির্দেশগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলো না?
প্রধান বিচারপতি এই মামলায় মূল আসামি সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ব্যাপারে বলেন, সিভিল ভলান্টিয়ারদের কীভাবে নিয়োগ করা হয়? কাজই–বা কী তাঁদের? কোন আইনে তাঁদের নিয়োগ করা হয়? কোন প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নিয়োগ করা হয়? বেতন কত? কীভাবে বেতন দেওয়া হয়?—এসব বিষয় রাজ্য সরকারকে পরবর্তী শুনানিতে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে জানাতে হবে।