গুজরাট ভোট নিয়ে রাহুলের পণ ভঙ্গ

ভারত জোড়ো যাত্রা ছেড়ে গুজরাটে দলীয় প্রচারে যাচ্ছেন রাহুল। ২২ নভেম্বর যাত্রা বিরতির সময় তিনি গুজরাটে প্রচারাভিযান চালাবেন।

রাহুল গান্ধী

আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ঘোষণা না হলেও প্রায় নিশ্চিত, দলের চাপে পণ ভঙ্গ হতে চলেছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর। ভারত জোড়ো যাত্রা ছেড়ে তিনি গুজরাটে দলীয় প্রচারে যেতে রাজি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে ২২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) যাত্রা বিরতির সময় তিনি দিনভর গুজরাটে প্রচারাভিযানে শামিল হবেন। পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যের বিধানসভার ভোট হবে দুই দফায়। আগামী ১ ও ৫ ডিসেম্বর। ফল প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর।

রাহুল ঠিক করেছিলেন ভারত জোড়ো যাত্রাকে দৈনন্দিন ভোট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করবেন না। যাত্রা চলাকালে দলের কোনো নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন না। এত দিন ধরে পণ ভঙ্গ করেননি। যাত্রা চলাকালে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তেলেঙ্গানার মনুগোডে বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন ছিল। রাজ্যে থেকেও রাহুল সেই উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যাননি। অথচ কংগ্রেস বিধায়ককে ভাঙিয়ে দলে টেনে প্রার্থী করে বিজেপি ওই কেন্দ্র দখল করতে চেয়েছিল। ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজেপিকে হারিয়ে কেন্দ্রটি কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় রাজ্যের শাসক দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি। কংগ্রেস হয় তৃতীয়।

ভারত জোড়ো যাত্রা ছেড়ে রাহুল হিমাচল প্রদেশেও যাননি প্রচার করতে। উত্তর ভারতের এই পাহাড়ি রাজ্যে ভোট হলো ১২ নভেম্বর। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাঁর অনুরোধেও রাহুল পণ ভাঙেননি। গত ৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ু থেকে যাত্রা শুরুর পর দীপাবলি পর্যন্ত দীর্ঘ দেড় মাস তিনি এক দিনের জন্যও যাত্রা ও যাত্রীদের ছেড়ে অন্যত্র যাননি। যাত্রা বিরতিও তিনি যাত্রীদের সঙ্গেই কাটিয়েছেন। দেড় মাস পর দীপাবলির জন্য তিন দিন বিরতি ছিল। সে সময় রাহুল দিল্লি এসেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি পদে মল্লিকার্জুন খাড়গের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

গুজরাটে এবারের লড়াইকে বহু বছর পর আক্ষরিক অর্থে ত্রিমুখী করে তুলেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছয় মাস ধরে বারবার মোদি-রাজ্য সফর করেছেন। আপের অতি সক্রিয়তা ও কংগ্রেসের নিস্পৃহতার কারণে এমন একটা হাওয়া ওই রাজ্যে উঠেছে, যাতে দৃশ্যত মনে হচ্ছে বিজেপির প্রথম চ্যালেঞ্জার আম আদমি পার্টি। গান্ধী পরিবারের কেউ রাজ্য সফরে না যাওয়ায় রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা নিজেদের অসহায় মনে করছেন। বারবার তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অসুস্থ সোনিয়া না গেলেও রাহুল-প্রিয়াঙ্কা যেন প্রচারে আসেন। নবনির্বাচিত সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও এ নিয়ে গান্ধীদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেন। দলীয় সূত্রের খবর, দলের চাপে শেষ পর্যন্ত রাহুল পণ ভঙ্গে রাজি হয়েছেন। এক দিনের জন্য হলেও গুজরাট যাবেন তিনি। সম্ভাব্য দিন ২২ নভেম্বর। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেস এখনো এই বিষয়ে কোনো ঘোষণা করেনি।

রাহুলের মন বদলের পেছনে আরও একটা কারণ দিল্লি পৌরসভার ভোট। গুজরাটে ভোট যে সময়, সেই সময়ই রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিল্লি পৌরসভার ভোটের দিন ঘোষণা করেছে। ভোট হবে ৪ ডিসেম্বর, গণনা ৭ ডিসেম্বর। আচমকা এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ গুজরাট থেকে আপের নজর দিল্লিতে ফিরিয়ে আনা। আপ নেতৃত্বের ধারণা, গুজরাটে বিজেপির অবস্থান কতটা নড়বড়ে এই সিদ্ধান্ত তার প্রমাণ। কারণ যা–ই হোক, ঘটনা হলো আপের কাছে গুজরাটের চেয়ে দিল্লি পৌরসভার দখল নেওয়া বেশি জরুরি।

কারণ, আগের তিন পৌরসভারই (তিনটি ভেঙে এখন একটি) নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ছিল বিজেপির হাতে। সেই কারণে দিল্লি সরকারের কাজে কেজরিওয়ালদের প্রতি পদে বাধা পেতে হতো।

দিল্লি পৌরসভার নির্বাচন গুজরাটের সঙ্গে হওয়ার ফলে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছে আম আদমি পার্টি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দিল্লি নিয়ে। গুজরাটে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে যাঁরা রাজ্য চষে বেড়াচ্ছিলেন, তাঁরা এখন দিল্লিতে বেশি নজর দিচ্ছেন। গুজরাটের কংগ্রেস নেতৃত্ব এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে সচেষ্ট। প্রচারের শেষ দিকে তাই তারা গান্ধীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের রাজ্য সফরে চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজ্যে আপ দ্বিতীয় প্রধান দল হয়ে গেলে কংগ্রেসের পক্ষে তা হবে বাড়তি বিপর্যয়।

এআইসিসি সূত্রের খবর, ৪৩ জন নেতার এক তালিকা তৈরি হয়েছে, যাঁরা গুজরাটে প্রচারের শেষ দিকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যাবেন। সেই তালিকায় রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, খাড়গের সঙ্গে রয়েছেন কেরালার রমেশ চেন্নিথালা, মধ্যপ্রদেশের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং ও কমলনাথ, হরিয়ানার ভূপিন্দর সিং হুডা, মহারাষ্ট্রের অশোক চহ্বান, রাজস্থানের তরুণ নেতা শচীন পাইলট। আর রয়েছেন গুজরাট কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। গুজরাট নির্বাচনের তদারকের দায়িত্বে রয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। তাঁর সঙ্গে প্রচারে রয়েছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।