ভারতের মণিপুরে জাতিগত দাঙ্গায় ধর্ষণের শিকার এক নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেব। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই নারী তার ছেলে ও স্বামীর মৃতদেহ দেখতে চান। এ জন্য মণিপুরের রাজ্যপালের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী।
বিজেপি–বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ১৬টি দলের ২১ জন সংসদ সদস্য দুই দিনের সফরে গতকাল মণিপুরে যান। সফর শেষে আজ রোববার মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূইয়া উইকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাঁরা। এ সময় গত দুই দিনে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গায় নির্যাতনের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে যা জানতে পেরেছেন, তা তুলে ধরেন।
রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেব সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, যাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন, যাঁকে গত ৪ মে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানো হয় এবং দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। ওই নারীসহ দুজনকে বিবস্ত্র ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিও কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই নারীর ছেলে ও স্বামীকেও হত্যা করা হয়েছে। তিনি অনুরোধ করেন তাঁকে অন্তত একবার হলেও তাঁদের মৃতদেহ দেখতে দেওয়ার জন্য।
সুস্মিতা দেব সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা বিষয়টি রাজ্যপালের কাছে তুলে ধরবেন। তবে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন কি না, তা জানা যায়নি।
এদিকে রাজ্যপাল অনুসূইয়া উইকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, পুরো ঘটনার জন্য রাজ্যপাল দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা যা দেখেছি, সবই রাজ্যপালের সামনে তুলে ধরেছি। তিনি তাঁর মত জানিয়েছেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে আমরা সব সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলি। তিনি কুকি বা মেইতেই যা–ই হন না কেন। তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে যে অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা সবাইকে একসঙ্গে সমাধান করতে হবে।’
মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় সম্পর্কে রাজ্যপালের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়েছিলেন বিরোধীরা। এতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শান্তি ও সম্প্রীতি সুনিশ্চিত করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দ্রুত পুনর্বাসন। এ ছাড়া মণিপুরে জাতিগত সংঘাত নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে, মণিপুরের পরিস্থিতির প্রতি ‘পূর্ণ উদাসীনতা’ এবং সম্পূর্ণ নীরব থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কড়া ভাষায় নিন্দা করেন বিরোধীরা।
আগামীকাল সোমবারে ভারতের পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হবে। তখন মণিপুর প্রসঙ্গ নিয়ে এই ১৬ জন সংসদ সদস্য শুধু তাঁদের বক্তব্যই দেবেন না, সরকারকে যে কোণঠাসা করবেন, তা বলা বাহুল্য। ধারণা করা হচ্ছে, অধিবেশনে তৃণমূলের সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেবও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি যে নারীদের যৌন নির্যাতন করা হয়েছে তাঁদের কথাও তিনি তুলে ধরবেন।
উল্লেখ্য, মণিপুর সফরের মাধ্যমে এই প্রথম নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দলগুলো মাঠপর্যায়ে একটি তদন্তের কাজ সম্পন্ন করল। তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিআইএমের মতো পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দুটি দল দেশের স্বার্থে একটি সামগ্রিক বিজেপি–বিরোধী জোটের প্রথম কর্মসূচি পালন করল। এটিকে বিরোধী জোটের একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আগামীকাল পার্লামেন্টে তাঁরা একজোট হয়ে বিষয়টি কীভাবে তুলে ধরেন, সেটাই দেখার বিষয়।