ভারতের নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধীরা। আজ বুধবার ১৯টি দলের তরফ থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, সংসদ ভবন থেকে গণতন্ত্রের অন্তরাত্মাকেই বের করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভবন তাদের কাছে তাই অর্থহীন।
আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন। বিরোধীদের আপত্তি এখানেই। তাদের দাবি, দেশের রাষ্ট্রপতি সংসদের অভিভাবক। সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদেও তা স্পষ্ট করে বলা আছে। রাষ্ট্রপতিই সংসদের অধিবেশন ডাকেন এবং তিনিই সমাপ্তি ঘটান।
বিরোধীরা বলছে, প্রতিবছর রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিয়ে দুই কক্ষের সদস্যদের উপস্থিতিতে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সবার আগে বিবেচিত ও আলোচিত হয় তাঁর ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক প্রস্তাব। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন রাষ্ট্রপতিকে দিয়েই করানো উচিত। তা না করে, তাঁকে ব্রাত্য করে প্রধানমন্ত্রী প্রচারের সব আলো নিজের মুখে ফেলছেন।
বিরোধীরা বলছে, প্রথম আদিবাসী নারী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মু দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ায় একীকরণের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। অথচ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সরকারের এই আচরণ রাষ্ট্রপতির পক্ষে চরম অসম্মানজনকই শুধু নয়, সংবিধান অবমাননারও শামিল।
বর্জনের ঘোষণা দেওয়া এই ১৯ দলের মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, এমডিএমকে, ভিসিকে, শিবসেনা (উদ্ধব), সমাজবাদী পার্টি, সিপিআই, সিপিএম, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, রাষ্ট্রীয় লোকদল, জনতা দল (ইউ), এনসিপি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরালা কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও আরএসপি।
বিরোধীরা যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর অগণতান্ত্রিক কাজকর্ম নতুন কিছু নয়। বিরোধী নেতাদের সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। যখনই তাঁরা জনগণের স্বার্থে কিছু বলতে উঠেছেন, তখনই তাঁদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পক্ষ অধিবেশন ভণ্ডুল করে দিয়েছে। বিনা আলোচনায় কৃষি আইনের মতো বহু বিতর্কিত আইন পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংসদীয় কমিটিগুলোকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। কোভিড মহামারির সময় জনগণের টাকায় কোনোরকম আলোচনা না করে এই নতুন সংসদ ভবন তৈরি করা হয়েছে। এভাবে গণতন্ত্রের পীঠস্থান থেকে গণতন্ত্রের অন্তরাত্মাকেই খাঁচাছাড়া করা হয়েছে। আমাদের কাছে এই নতুন ভবন অর্থহীন।’
বিরোধী নেতারা বলেছেন, স্বৈরতন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই জারি থাকবে। সে লড়াই তাঁরা সরাসরি জনগণের মধ্যে নিয়ে যাবেন।
হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিনেই প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করছেন ২৮ মে। বিরোধীদের এতেও প্রবল আপত্তি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ বলেন, সংসদ ভবন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করা ঠিক নয়। সব দলকে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। এবার তাদের সিদ্ধান্ত।
সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি বিরোধীদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংসদ ভবনের অদূরে অ্যানেক্স ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। পাঠাগারের উদ্বোধন করেছিলেন রাজীব গান্ধী। অতএব, এটা নতুন কিছু নয়।
জবাবে কংগ্রেস বলেছে, সংসদ ভবন ও সেই চত্বরে অন্য স্থাপনার মধ্যে পার্থক্য আছে। বিজেপির মন্ত্রীরা সেই পার্থক্যটুকুও বুঝতে পারেন না। নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময়ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে ডাকা হয়নি। সেই দায়িত্বও নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন ঘিরে বিজেপি বিরোধিতা আরও দানা বাধল বলে মনে করা হচ্ছে। দিল্লি সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, তা–ও বিরোধী ঐক্যের অনুঘটক হয়ে উঠতে পারে। রাজ্যসভায় বিরোধীরা এক জোট হলে ওই অর্ডিন্যান্স আইনে রূপান্তর করা কঠিন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেই উদ্দেশ্যে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি গতকাল মঙ্গলবার বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আজ বৈঠকে বসেন উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে।
নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় বসতে পারবেন ৮৮৮ সদস্য (বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৪৩) আর রাজ্যসভায় ৩০০ (বর্তমানে ২৫০) জন।