ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল
ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল

কেজরিওয়ালের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে

আবগারি নীতি মামলায় ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁর সরকারের পাশাপাশি দল আম আদমি পার্টি বড় ধরনের নেতৃত্বের সংকটে পড়েছে। এখন প্রশ্ন, সরকার ও দল পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেজরিওয়ালের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে?

আম আদমি পার্টি অবশ্য বলেছে, কারাগারে থেকেই দলীয় প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন কেজরিওয়াল।

তবে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, কেজরিওয়ালের সম্ভাব্য বদলি হিসেবে তিনজনের নাম আলোচনায় আছেন। তাঁরা হলেন তাঁর স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল, মন্ত্রিসভার সদস্য অতীশী মারলেনা ও সৌরভ ভরদ্বাজ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

ভারতের ইতিহাসে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা অবস্থায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গ্রেপ্তার হলেন কেজরিওয়াল। ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে তাঁর দল আম আদমি পার্টি।

আম আদমি পার্টির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো এমন একজন যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে নিয়ে আসা, যিনি কেজরিওয়ালের অনুপস্থিতিতে দল ও সরকার উভয়ই দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারেন।

তবে কেজরিওয়ালের নেতৃত্বের যে গুণ, তার কাছাকাছি পর্যায়ের কাউকে এখন আপৎকালীন নেতা হিসেবে বাছাই করতে পারাটা আম আদমি পার্টির জন্য কঠিন কাজ হবে।

লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। আম আদমি পার্টি দিল্লি, পাঞ্জাব, গুজরাট, আসাম ও হরিয়ানায় লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের নির্বাচনী প্রচারে কেজরিওয়ালের মুখ্য ভূমিকা পালন করার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় এখানে একটা শূন্যতা তৈরি হলো।

কেজরিওয়ালের অনুপস্থিতিতে দিল্লি সরকারের শীর্ষ পদের জন্য তিনজনের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। সবার আগে আসছে কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতার নাম। তিনি দেশটির সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা।

আলোচনায় আছে দিল্লির মন্ত্রিসভার সদস্য অতীশীর নাম। তিনি সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, অর্থ, পিডব্লিউডি, রাজস্ব। তাঁকে কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অতীশী দলের একজন মুখপাত্রও। তিনি আম আদমি পার্টির সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের পক্ষে জোরালোভাবে কথা বলে আসছেন। সংবাদ সম্মেলন কিংবা টিভি চ্যানেলে কথা বলার সময় তাঁকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করতে দেখা যায়।

শীর্ষ পদের জন্য সম্ভাব্য অপর ব্যক্তি সৌরভ। তিনি মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। স্বাস্থ্য, নগর উন্নয়নসহ একাধিক দপ্তর সামলান তিনি। সৌরভ দলের সুপরিচিত মুখ। দল ও দলের নেতাদের পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা সোচ্চার। তাঁকেও বিজেপিবিরোধী আক্রমণ শাণতে দেখা যায়।

মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল আম আদমি পার্টি।

গত বছরের ডিসেম্বরে আম আদমি পার্টি ‘আমিও কেজরিওয়াল’ নামের একটি প্রচারাভিযান শুরু করে। এই প্রচারাভিযানে তারা লোকজনের কাছে জানতে চেয়েছিল, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর কি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত, নাকি কারাগারে থেকে সরকার পরিচালনা করা উচিত।

প্রচারাভিযানকালে আম আদমি পার্টির প্রধান এ বিষয়ে মতামত জানার জন্য দলের বিধায়ক ও দিল্লি পৌর করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এই মত দিয়েছেন যে দিল্লি সরকার পরিচালনার জন্য কেজরিওয়ালের জনরায় রয়েছে। তাই যেখান থেকেই হোক না কেন, তাঁরই দিল্লির সরকার চালানো উচিত।

দিল্লি ও পাঞ্জাবের ক্ষমতায় আছে আম আদমি পার্টি। এ ছাড়া গুজরাট ও গোয়ায় দলটির বিধায়ক আছে। কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ায় আম আদমি পার্টিকে এখন দলীয় প্রধান হিসেবে বিকল্প কাউকে খুঁজতে হবে। তবে দলটির সামনে বিকল্প কম।

দলের নেতৃত্বে সুনীতা ছাড়াও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ও দিল্লির মন্ত্রী অতীশির নাম আলোচিত হচ্ছে।