কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার আবারও উত্তাল হয়েছে পুরো পশ্চিমবঙ্গ। দিকে দিকে প্রতিবাদ মিছিলে প্রকম্পিত হয়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা, কলেজ স্ট্রিট, কলেজ স্কয়ার, রবীন্দ্র সদন, নন্দন, গোলপার্ক, এক্সাইড মোড়, বেহালা, ভবানীপুর, গড়িয়াহাট, ধর্মতলা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অলিগলি।
‘আমরা তিলোত্তমা’সহ বিভিন্ন ব্যানারে এসব বিক্ষোভ হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছে কলকাতার নাগরিক সমাজ। তাদের মিছিলটি কলেজ স্কয়ার থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিংয়ে শেষ হয়।
মিছিলটিতে হাজারো মানুষ যোগ দেন। বলিউড টালিউড তারকা, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেন। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি টালিউড তারকা অপর্ণা সেন, স্বস্তিকা মুখার্জি, অপরাজিতা আঢ্য, সোহিনী সরকার, দেবলীনা দত্ত, সৃজিত মুখার্জি, বাদশা মৈত্র, উষসী চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, চৈতী ঘোষাল, লগ্নজিতা চক্রবতীকেও দেখা গেছে। মিছিল থেকে জোর আওয়াজ ওঠে, ‘দফা এক, দাবি এক, সব দোষী শাস্তি পাক’।
দ্বিতীয় বৃহত্তর প্রতিবাদ মিছিলটির আয়োজন করে রামকৃষ্ণ মিশন। মিশনের প্রাক্তনী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কালো পোশাকে মৌন মিছিলে হাঁটেন। মিছিল শুরু হয় দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্ক থেকে, শেষ হয় নন্দন চত্বরে।
জুনিয়র চিকিৎসকেরাও এদিন আলাদা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার ১১টি বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তনরাও মিছিল করেছেন। বেহালা হাইস্কুল থেকেও প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছে। মিছিল শেষ হয় রবীন্দ্র সদনের কাছে এক্সাইড মোড়ে। রোববার ছুটির দিন থাকায় কলকাতার বিভিন্ন সংগঠনও আলাদা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সবার দাবি, ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি সুখেন্দু শেখর রায় আর জি করের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আবার হুংকার দিয়েছেন। তিনি রোববার বলেছেন, ‘১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই এভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে বাস্তিল দুর্গের পতন হয়েছিল। এই পতনই শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লব হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়।’ এর আগে ১৪ আগস্ট রাতে কলকাতার রাতজাগা কর্মসূচিতেও সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি।
বিজেপির রাজ্য মুখমাত্র ও সংসদ সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘তৃণমূলের শেষের সময় শুরু হয়ে গেছে। মানুষ তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’
তৃণমূল সংসদ সদস্য কাকলি ঘোষ দস্তিদার নারী চিকিৎসকদের নিয়ে নিজের করা বেফাঁস মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইছি। যদি ওই মন্তব্যে কারও মনে আঘাত লেগে থাকে তাহলে তার জন্য আমি দুঃখিত। একই সঙ্গে আমি আমার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি সব সময় নারীদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষার পক্ষে কথা বলি।’
গত শুক্রবার কাকলি ঘোষ এবিপি আনন্দের এক টক শোতে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, ‘ছাত্রীদের কোলে বসিয়ে পাস করিয়ে দেওয়ার চল শুরু হয়েছিল। যার (যেটার) আমি তীব্র নিন্দা করি, ঘৃণা করি। আমার ছেলেরা নিন্দা করেছিল বলে তাদের কম নম্বর দেওয়া হয়েছিল। তারা আজ প্রথিতযশা চিকিৎসক। কিন্তু কোলে বসিয়ে পাস করে দেওয়ার চলটা যে এখানে এসে দাঁড়াবে, উৎকোচ নিয়ে পাস করানো হবে কিংবা কেউ মুখ খোলার সাহস দেখালে যে তার থিসিস আটকে দেওয়া হবে, এমনটা আমি ভাবতে পারিনি।’ কাকলি ঘোষ নিজেও পড়াশোনা করেছিলেন এই আর জি কর মেডিকেল কলেজে।