অতীতের মতো আরেকবার ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ঘৃণা ভাষণের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগপূর্ণ প্রতিবেদন নাকচ করল ভারত। আজ শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল মার্কিন প্রশাসনের তৈরি ওই প্রতিবেদন ‘গভীর পক্ষপাতদুষ্ট’ জানিয়ে বলেন, ভারত সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা না থাকায় এমন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২০২৩ সালের বিশ্বের ধর্মীয় স্বাধীনতাসংক্রান্ত ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুত্ব এখনো বহু দেশ ও মানুষের কাছে স্বীকৃতি পায়নি। গুরুত্ব পায়নি। ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ভারত সম্পর্কে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, দেখা যাচ্ছে ঘৃণা ভাষণ, ধর্মান্তরবিরোধী আইন, সংখ্যালঘু ধর্মস্থান ও বাড়িঘর ভাঙার ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। এ প্রবণতা উদ্বেগজনক। পাশাপাশি পৃথিবীর অনেক জায়গায় ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় কঠোর পরিশ্রম করা হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে অতীতেও এ ধরনের প্রতিবেদনের কড়া জবাব দেওয়া হয়েছে। এবারও হলো। আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ের শুরুতে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘অতীতের মতো এ প্রতিবেদনও গভীরভাবে পক্ষপাতপূর্ণ। ভারত ও ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা না থাকাই এর কারণ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ভোটব্যাংক রাজনীতির দিকে দৃষ্টি রেখেই এ প্রতিবেদন তৈরি। আমরা তাই সরাসরি এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ প্রতিবেদন নিতান্তই একপেশে। বেছে বেছে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা তুলে পক্ষপাতদুষ্ট অনির্ভর সূত্রের ভিত্তিতে একপেশে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া এর মধ্য দিয়ে ভারতের আইনসভা ও বিচার বিভাগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিবৃতিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, উপাসনাস্থলে হাঙ্গামা ও বর্ণবাদী আক্রমণেরও উল্লেখ করা হয়েছে। মুখপাত্র বলেন, ভারত ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত ঘৃণা অপরাধের একাধিক ঘটনা সে দেশের সরকারের নজরে এনেছিল। সন্ত্রাসবাদে উসকানি দেওয়ার অভিযোগও এনেছিল। তিনি বলেন, এ ধরনের আলোচনার অর্থ অন্য দেশে নাক গলানোর অধিকার দেওয়া নয়।
গত বছরও যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাসংক্রান্ত প্রতিবেদনে ভারতের বহুত্ববাদী রাজনীতির ওপর আক্রমণ, ধর্মাচরণের অধিকার খর্ব করা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। তখনো ভারত বলেছিল, ওই প্রতিবেদন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। সেটিও পক্ষপাতপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হয়েছিল। এবারও তেমনই প্রতিক্রিয়া দিল ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শিখ খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টায় ভারতের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সংস্কারের চরিত্র কী, সে বিষয়ে মুখপাত্র অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি।
পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ভারতে যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে, তার অভিমত বা মতামত সম্পর্কেও আজ পর্যন্ত সরকার নীরব। বস্তুত, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ঘৃণা ভাষণ বৃদ্ধির প্রবণতার বিরুদ্ধে ভারত যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে সরব, পান্নুনের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই নিরুচ্চার। স্পষ্টত এ অভিযোগ ভারতকে অস্বস্তিতে রেখেছে।