ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

৯ বছর পর পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কী আলোচনা হবে

দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারতের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান যাচ্ছেন। আগামী বুধবার, সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, জয়শঙ্কর আগামী বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামাবাদে পৌঁছাবেন। ওই দিন রাতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। মনে করা হচ্ছে, জয়শঙ্কর সেই নৈশভোজে যোগ দেবেন।

তবে ইসলামাবাদে গেলেও পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয় নিয়ে জয়শঙ্কর আলোচনা করবেন না। এ নিয়ে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কয়েক দিন আগে তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘আমি বহুপক্ষীয় এক সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছি। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের অবতারণার প্রশ্ন নেই।’

তবে আলোচনা না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে সম্মেলন শুরুর আগে অথবা সম্মেলনের অবসরে কুশল বিনিময়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বুধবার সন্ধ্যায় গিয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ইসলামাবাদ থেকে জয়শঙ্করের ভারতে ফেরার কথা।

বহুপক্ষীয় আসর দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জায়গা নয় জানালেও পাকিস্তান এই আসরে কাশ্মীর ও গাজা প্রসঙ্গ তুলতে সচেষ্ট হতে পারে। গতকাল রোববার সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের এক মন্তব্যে সেই ইঙ্গিত মিলেছে। ইসলামাবাদে তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, শেহবাজ শরিফের শাসনামলে কাশ্মীর ও গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে পাকিস্তান সব সময় সরব থেকেছে।

জয়শঙ্কর তাঁর ভাষণে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের অবতারণা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সম্ভবত তিনি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেবেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এই সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদ যাবেন। যেমন উপস্থিত থাকবেন অন্যান্য সদস্য দেশের সরকারপ্রধানেরা। চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জয়শঙ্করের দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কিছু জানায়নি। ভারত সাধারণত এই ধরনের সম্মেলনের অবসরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে থাকে।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শেষবার পাকিস্তান গিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি সে দেশে গিয়েছিলেন ‘হার্ট অব এশিয়া কনফারেন্সে’ যোগ দিতে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি, সেখানকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা ছিল সেই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে ২৭টি দেশ অংশ নিয়েছিল।

বহুপক্ষীয় সম্মেলন হলেও সেবার সুষমা বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজের সঙ্গে। সেই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধ থাকা সার্বিক সংলাপ বা ‘কম্প্রিহেনসিভ ডায়লগ’ নতুনভাবে শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু সেই বন্ধ আলোচনা আজও শুরু হয়নি। ভারতের যুক্তি, সন্ত্রাস ও সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না। পাকিস্তান বারবার নানাভাবে আলোচনায় আগ্রহ দেখালেও ভারত আজও সেই যুক্তিতে অটল।