টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। রোববার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের উন্মুক্ত আঙিনায় শপথ নেন তিনি। প্রথমবারের মতো জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে চলা মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় বিহারের ছয়জন নেতার ঠাঁই হয়েছে। চলুন তাঁদের পরিচয় জেনে নেওয়া যাক।
এবার সরকার গঠনে বিজেপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে কয়েকটি দল, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) জেডি–ইউ। রাজীব রঞ্জন সিং জেডিইউর সাবেক জাতীয় সভাপতি। তিনি নীতীশ কুমারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তিনি এর আগে রাজ্য সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬৯ বছর বয়সী রাজীব সিংয়ের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অতীত। ১৯৭৪ সাল থেকে রাজনীতির মাঠে রয়েছেন তিনি। তিনি পুরোনো জনতা দলের সদস্য ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের গড়ে তোলা সমতা দলের প্রতিষ্ঠানকালীন সদস্য ছিলেন তিনি।
বিহারের মুঙ্গের থেকে চারবার সংসদ সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন রাজীব সিং। তিনি রাজ্যের পানিসম্পদ ও পরিকল্পনা উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে জেডি–ইউর জাতীয় সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে দেন রাজীব সিং। সে সময় আলোচনা ছিল, নীতীশ কুমারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এই দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। তারপর নিজ হাতে দলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন নীতীশ। পরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) জোটে যোগ দেয় জেডি–ইউ।
জেডি–ইউর আরেক নেতা রামনাথ ঠাকুর (৭৪) ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন। তিনি রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরের ছেলে। বিহার থেকে দুই দফায় রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন নীতীশ কুমারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রামনাথ ঠাকুর। তিনি একসময় বিহারের বিধানসভার সদস্য ছিলেন এবং আরজেডির নেতা লালু প্রসাদ যাদবের প্রথম মন্ত্রিসভায় আখ মন্ত্রণালয় সামলান।
২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভায় একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন রামনাথ ঠাকুর। তিনি রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার, আইন এবং তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল রাজ্যসভার সদস্য হন।
বিহারের বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং (৭১) টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। বিগত সরকারে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা গিরিরাজ সিং ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে নওডা থেকে নির্বাচিত হন। ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে বেগুসরাই থেকে জয়ী হন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনেও এই আসন নিজের দখলে রাখেন তিনি।
মোদির দ্বিতীয় দফার সরকারে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত রাজ বিভাগ এবং পশুপালন ও মৎস্যসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন গিরিরাজ সিং। আগে তিনি বিহারে এনডিএর জোট সরকারে সমবায়, পশুপালন ও মৎস্যসম্পদমন্ত্রী ছিলেন।
অভিনেতা থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো চিরাগ পাসওয়ানও নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। ৪১ বছর বয়সী চিরাগ পাসওয়ান বিহারের লোক জনশক্তি দলের (রাম বিলাস) প্রেসিডেন্ট। বিহার থেকে তৃতীয়বারের মতো লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এবার তাঁর দলের টিকিট নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা পাঁচজনই জয়ী হয়েছেন।
বিহারের হাজিপুর আসন থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরজেডি নেতা শিব চন্দ্র রামকে হারিয়েছেন চিরাগ। চিরাগ পাসওয়ান তাঁর বাবা দলিত নেতা রাম বিলাস পাসওয়ানের উত্তরাধিকার বহন করে চলছেন। রাম বিলাস আটবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত ছিলেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
২০১১ সালে ‘মিলে না মিলে হাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয়জগতে নাম লেখান চিরাগ পাসওয়ান। ওই সিনেমায় তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত। কঙ্গনা অবশ্য এবার হিমাচল প্রদেশের মান্ডি থেকে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। চিরাগ–কঙ্গনার ওই চলচ্চিত্রটি ব্যবসা সফল হয়নি। এরপর বাবার কাছে রাজনীতির দীক্ষা নেন চিরাগ পাসওয়ান। তারপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ছাত্রনেতা থেকে সফল রাজনীতিক হয়েছেন বিহারের নিত্যানন্দ রায় (৫৮)। তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) নেতা হিসেবে রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন। পরে বিহারের হাজিপুর আসন থেকে চারবার এমএলএ নির্বাচিত হন এই বিজেপি নেতা।
এবার তৃতীয়বারের মতো লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নিত্যানন্দ রায়। তিনি ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদে মোদি সরকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিগত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়।
বিহারে এনডিএ জোটের নেতাদের মধ্যে দলিত প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁদের অন্যতম জিতেন রাম মাঞ্জি। হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা-সেক্যুলার (এইচএম–এস) দলের প্রতিষ্ঠাতা জিতেন রাম মাঞ্জি বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী।
জিতেন মাঞ্জির রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা হয়েছিল কংগ্রেসের হাত ধরে। তিনি ১৯৮০ সালে কংগ্রেসের টিকিটে বিহারের বিধানসভার সদস্য হন। তিনি সব সময় রাজ্য সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বেশ কয়েক বছর চন্দ্রশেখর সিংয়ের সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালের মে মাসে বিহারের ২৩তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জিতেন মাঞ্জি। সেবার লোকসভা নির্বাচনে দলের ব্যর্থতার জের ধরে নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়লে এই পদে বসেন তিনি। পরে অবশ্য নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তাঁকে জেডি–ইউ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি রাজনৈতিক দল এইচএম-এস গঠন করেন।