ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলের নির্বাচনে, বিশেষত উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ ক্রমশ আরও বড় ইস্যু হয়ে উঠছে। বাংলাদেশঘেঁষা বরাক উপত্যকার ধলাই আসনে ১৩ নভেম্বরের বিধানসভা উপনির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশি প্রশ্নে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মধ্যে ব্যাপক বাদানুবাদ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বলেন, কংগ্রেস বিজেপির প্রার্থীকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে ভোটের মেরুকরণ করতে চাইছে। উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী নিহার রঞ্জন দাস দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী ধ্রুবজ্যোতি পুরকায়স্থের বিপক্ষে।
প্রাথমিকভাবে বিজেপির তরফেই প্রার্থী বাংলাদেশি না ভারতীয়, এ নিয়ে বিতর্ক শুরু করা হয়। এই বিতর্ক শুরু করেন বিজেপির কাছাড় জেলার সহসভাপতি অমিয়কান্তি দাস। এই আসনে তিনি নিজে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে বিজেপি নীহার রঞ্জনের নাম ঘোষণার পরে অমিয়কান্তি দল থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তিনি অবশ্য পদত্যাগপত্র ও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। কিন্তু এর আগে ধলাইয়ে এক সমাবেশে বিতর্ক উসকে দিয়ে তিনি বলেন, নীহার রঞ্জনের মা–বাবা বাংলাদেশের বাসিন্দা।
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিকে একটি ইস্যু করে তোলে কংগ্রেস। গত রোববার ধলাইয়ে নির্বাচনী প্রচারে আসাম কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বোরা বলেন, বিজেপির নেতারাই বিজেপির প্রার্থীকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করেছেন।
বোরা বলেন, ‘অমিয়কান্তি দাস প্রকাশ্যে বলেছেন, বিজেপির ধলাই প্রার্থী নীহাররঞ্জন দাস একজন বাংলাদেশি। তিনি একজন বিজেপি নেতা, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রীর আসামের জনগণকে বলা উচিত, কেন বিজেপি এখানে একজন বাংলাদেশিকে প্রার্থী করেছে। এটা কোনো ছোট বিষয় নয়।’
নীহাররঞ্জন পেশায় আইনজীবী। তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। এটা কংগ্রেসের কৌশল। এর কোনো সত্যতা নেই।
গতকাল মঙ্গলবার ধলাইয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের কথা বলে কংগ্রেস মানুষকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে…। এ ধরনের ইস্যু তুলে কংগ্রেস হিন্দু বাঙালিদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা শুরুর চেষ্টা করছে। আমরা এ ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কংগ্রেস নতুন করে একটি ইস্যু তৈরির (বাংলাদেশি বলে) চেষ্টা করছে। এমন অভিযোগ তুললে কেবল নিহারের সমস্যা হবে না, অনেক সাধারণ মানুষেরও সমস্যা হবে।
নাগরিকত্ববিষয়ক যেকোনো ইস্যু বরাক উপত্যকায় সংবেদনশীল বিষয়। প্রথমত, অঞ্চলটির সঙ্গে বাংলাদেশের ১২৫ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, দেশ ভাগের সময় এবং তারপর বৃহৎসংখ্যক হিন্দু বাঙালি বরাক উপত্যকায় এসেছেন।
আসামের বিজেপি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনকে বাঙালি হিন্দুদের জন্য স্বস্তির উপায় হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল, যা গোটা আসামে খুব একটা কার্যকর হয়নি। এখন বিতর্ক আরও বেড়েছে। প্রতি নির্বাচনে কে বাংলাদেশি নয় এবং কে বাংলাদেশি—এ নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। অতীতেও এই বিতর্ক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা আরও গভীরতা পেয়েছে।