বলিউড তারকা শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান মাদক-সংক্রান্ত মামলার সব অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত হলেও আবার সেই ঘটনা ভারতে সংবাদের শিরোনামে পরিণত হয়েছে।
আরিয়ানের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর (এনসিবি) তৎকালীন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সমীর বানখেড় দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শাহরুখের পরিবারের কাছে ২৫ কোটি রুপি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করে। সেখানে বানখেড় একজন।
সিবিআই জানায়, অভিযোগ রয়েছে, বানখেড়ে তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে আরিয়ান খানের পরিবারকে হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, অর্থ না দিলে তাঁকে (আরিয়ান) মাদকের মামলায় ফাঁসানো হবে।
বানখেড়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁকে ‘দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য পুরস্কৃত করা’ হচ্ছে। এ বিষয়ে আরিয়ান খানের পরিবার থেকে তাৎক্ষণিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুই বছর আগে ২০২১ সালে মুম্বাইয়ে এনসিবির আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন সমীর বানখেড়ে। ওই সময় মুম্বাই থেকে গোয়াগামী একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেন ভারতের এনসিবির কর্মকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে মাদক পার্টি চলছিল। আটক ১০ জনের মধ্যে শাহরুখপুত্র আরিয়ান খানও ছিলেন।
মাদকের ঘটনায় আরিয়ানের খানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। প্রায় তিন সপ্তাহ জেল খাটতে হয়েছিল শাহরুখের ছেলেকে। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান। ওই ঘটনায় ভারতসহ বিশ্বে আলোচনা হয়েছিল।
কিন্তু সেই বছরের (২০২১) নভেম্বরে এ ঘটনা নতুন মোড় নেয়। বানখেড় মামলাটি ভুলভাবে পরিচালনা করেছেন বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এমনকি তাঁকে মুম্বাই জোনের এনসিবির প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ওই সময় ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির নেতা ও মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিক বানখেড়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। কারণ, এই এনসিবি কর্মকর্তার হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নবাব মালিকের জামাতা সমীর খান। সেবারও মাদক ইস্যুতেই চালানো হয়েছিল অভিযান।
আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সেই মামলাসহ আরও ছয়টি তদন্তাধীন মামলা বানখেড়ের কাছ থেকে নিয়ে বিশেষ তদন্তদলকে দেওয়া হয়।
ডিসেম্বরেই এনসিবিতে বানখেড়ের মেয়াদ শেষ হয়। এর পাঁচ মাস পর তাঁকে চেন্নাইয়ের কর দপ্তরে পাঠানো হয়। বিভিন্ন খবরে বলা হয়, ওই সময় ছুটিতে তিনি বেশির ভাগ সময় মুম্বাইয়ে কাটান। এই সময়ের মধ্যে ২০২২ সালের মে মাসে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বাতিল করে মাদক সংস্থা।
আগস্টে মামলাটি আবার খবরের শিরোনাম হয়। সে সময় বানখেড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন বলে থানায় অভিযোগ করেন। একই মাসে তিনি আরেকটি অভিযোগ করেন যে তাঁকে এনসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়রানি করেছেন।
সিবিআই বলছে, বানখেড়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ আনেন এনসিবির এক কর্মকর্তা। এরপরই বানখেড়ে ও আরও চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
সিবিআই বলছে, এনসিবির একটি বিশেষ তদন্তদল বানখেড়ে যেভাবে তদন্ত করেছেন, সেখানে অনেকগুলো অনিয়ম পেয়েছেন। সংস্থাটি তাদের অভিযোগে জানায়, এ মামলায় (আরিয়ানের বিরুদ্ধে হওয়া মাদক মামলা) সরকারি নথি থেকে সন্দেহভাজন ১৭ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বানখেড়ে এনসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিযানে কেপি গোসাভি ও তাঁর সহযোগী সানভিল ডি’সুজা নামের দুজন সাধারণ মানুষকে ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ হিসেবে রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁদের এমনভাবে সেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে যে সন্দেহভাজনেরা মনে করেছেন তাঁরাও এনসিবি কর্মকর্তা।
এমনকি অভিযানের পর গোসাভিকে এনসিবি দপ্তরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা নিয়মের ব্যত্যয়। তিনি সেলফি তুলেছেন ও একজন অভিযুক্তের কথা রেকর্ড করেছেন।
তদন্তদলের তথ্যমতে, এই রেকর্ড ব্যবহার করে গোসাভি আরিয়ান খানের পরিবারের কাছে তাদের ছেলেকে মাদক রাখার দায়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ২৫ কোটি রুপি দাবি করেন। এরপর দর-কষাকষি করে ওই অর্থ ১৮ কোটি রুপিতে নেমে আসে এবং গোসাভি ও ডি’সুজা টোকেন হিসেবে ৫ কোটি রুপি নেন। পরে অবশ্য এর একটি অংশ তারা ফিরিয়ে দেয় বলে সিবিআই জানায়। তবে আরিয়ানের পরিবার এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।
সিবিআই আরও অভিযোগ করে, তদন্ত চলাকালে বানখেড়ে তার ঘোষিত আয়ের বিষয়ে ‘সন্তোষজনক প্রমাণ’ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত সোমবার সিবিআই কর্মকর্তারা বানখেড়ের বাড়ি ছাড়াও মুম্বাইয়ের ২৮টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছেন।
অভিযানের পর বানখেড়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা আমার বাড়িতে ২৩ হাজার রুপি ও চারটি সম্পত্তির কাগজপত্র পেয়েছে। এসব সম্পত্তি আমি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেকার।’
গতকাল মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী ক্রান্তি রেদকার বানখেড়ে বলেছেন, বানখেড়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুল। তিনি বলেন, ‘আমরা সিবিআইকে তাদের কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছি। আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমরা তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’