ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হচ্ছে। আজ শনিবার সপ্তম ও শেষ দফার ভোটে সাত রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৭ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
দুটি কারণে শেষ পর্বের ভোটের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই। প্রথমত, উত্তর প্রদেশের বারানসি আসনে বিজেপির প্রার্থী তিনি। ২০১৪ সালে গুজরাটের বরোদা ছাড়াও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বারানসিতে। দুই আসনেই জেতার পর বরোদা ছেড়ে বারানসিকেই তিনি আঁকড়ে ধরেন। এবার জিতলে সেটা হবে তাঁর জয়ের হ্যাটট্রিক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তিনি ক্ষমতাসীন থাকার হ্যাটট্রিক করতে চাইছেন।
দ্বিতীয় কারণ, দক্ষিণ ভারতের শেষ ভূখণ্ড কন্যাকুমারীতে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত ‘বিবেকানন্দ রক’-এ গিয়ে তাঁর ধ্যান করার সিদ্ধান্ত। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেখানে শুরু হয়েছে তাঁর ধ্যানপর্ব ও আরাধনা। আজ শনিবার ভোট পর্ব সাঙ্গ হলে তিনি ধ্যান ভঙ্গ করবেন।
ধ্যানের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী বলে বিরোধীরা সমস্বরে প্রতিবাদী হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এর মধ্যে দোষের কিছু দেখেনি। বিরোধীদের দাবি ছিল, ধ্যানমগ্ন প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও খবর প্রচার বন্ধে কমিশন নিষেধাজ্ঞা জারি করুক। ইসি তা-ও মানেনি। ফলে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই গণমাধ্যমে প্রচারের শীর্ষে মোদি। প্রচারের এই তীব্রতায় শেষ পর্বের ভোটের প্রচার যেন গৌণ হয়ে পড়েছে।
প্রচারে গৌণ হলেও শেষ পর্বের ভোটের গুরুত্ব কিন্তু কমেনি। শেষ দফাতেই উত্তর প্রদেশের বারানসিসহ বাকি মোট ১৩ আসনের ভোট। ভোট হবে পাঞ্জাবের ১৩ আসনেও। পশ্চিমবঙ্গের ৯ আসনেও আজ ভোট। একই সঙ্গে ভোট গ্রহণ হবে বিহারের ৮, ওডিশার ৬, হিমাচল প্রদেশের ৪ ও ঝাড়খন্ডের ৩ এবং কেন্দ্রশাসিত চণ্ডীগড়ের একমাত্র আসনে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শেষ পর্বের উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন হিমাচল প্রদেশে অভিনেত্রী কঙ্গনা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, চণ্ডীগড়ে কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি এবং পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ দফা ভোটের আগে মোদি পাঞ্জাবে তাঁর শেষ জনসভা করেন। গত বৃহস্পতিবার সেই জনসভায় ভাষণ দিয়ে তিনি সোজা চলে যান তামিলনাড়ু। সন্ধ্যাতেই ঢুকে পড়েন ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের মিলনস্থলে তীর থেকে ৫০০ মিটার দূরে শেষ প্রস্তরখণ্ডে নির্মিত বিবেকানন্দ স্মৃতিসৌধে। এই সৌধেই রয়েছে সেই স্থান, এখন যার নাম ‘ধ্যানমণ্ডপ’, যেখানে ১৮৯২ সালে ধ্যানে বসেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, যাঁর গৃহী নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ।
সেই প্রস্তরখণ্ডে ধ্যানমগ্ন বিবেকানন্দ গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন ভারতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। ১৩২ বছর পর সেখানে নির্মিত সৌধে আরও এক নরেন্দ্র ৪৮ ঘণ্টা ধরে ধ্যানে কী অবলোকন করবেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। যদিও এটুকু জানা, ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচার শেষ হলে তিনি মহারাষ্ট্রের প্রতাপগড়ে গিয়ে ধ্যান করেছিলেন। ২০১৯ সালে ভোটের প্রচার বন্ধ হলে চলে গিয়েছিলেন কেদারনাথ। সেখানে এক গুহায় ধ্যান করেছিলেন। এবার তিনি বেছে নিলেন কন্যাকুমারী। তফাত একটাই, আগের দুবার তিনি ছিলেন নশ্বর মানব, এবার নিজেকে অবিনশ্বর ঘোষণা করে জানিয়েছেন, তিনি ঈশ্বর প্রেরিত। পরমাত্মার অংশ।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে গতকাল বলেন, ঈশ্বরের আরাধনা করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী করতেই পারেন। তবে তা নিজ গৃহে করুন। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশাবেন না। সেটা অধর্ম।
ধর্ম-অধর্মের এই ফারাক বিজেপি কানে তুলতে নারাজ। প্রতিবারের মতো এবারের ভোটেও মোদি তাই ধর্মীয় মেরুকরণে সচেষ্ট।